নিজস্ব প্রতিবেদক : দিন দিন লোকসান বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনারগাঁও টেক্সটাইলের। তবে লোকসানে থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে টানা বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। একদিকে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে, অন্যদিকে শেয়ারদরে উল্লম্ফনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার সর্বশেষ ২৩ টাকা ১০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর ২২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ৮০ পয়সা ওঠানামা করেছে। গত জানুয়ারি মাসের শেষদিন কোম্পানির শেয়ার ২০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ গত তিন কার্যদিবস টানা বাড়ছে কোম্পানির শেয়ারদর। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি কোম্পানির শেয়ার ১৪ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এর পর থেকে বেশিরভাগ সময় কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। অর্থাৎ আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ১১ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৩ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা বা ১১৬ শতাংশ।
এদিকে দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ইতোমধ্যে কোম্পানিটিকে ডিএসইর পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানিটির দর বাড়ার কারণ জানতে কোম্পানি সচিব মনির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দর বাড়ার কারণ ‘জানা নেই’ বলে জানান। লোকসান বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ব্যবসা দিন দিন খারাপ যাচ্ছে। আর এ কারণে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানিটি বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা।
গত বার্ষিক সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান একেএম আজিজুর রহমান শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্যে জানান, কোম্পানিটি ২০১৬ সালের চেয়ে গত সমাপ্ত হিসাববছরে টার্নওভার ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তবে গ্যাস না থাকায় কারখানা বিদ্যুৎচালিত। তাই আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চূড়ান্ত লাভ করতে পারিনি। লোকসানের কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, তুলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী কিন্তু সুতার বাজার নি¤œমুখী। এ কারণে লোকসানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে কোম্পানিটিকে গত দুই মাসে তিনবার নোটিশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে বারবার দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন।
সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৩ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২২ পয়সা। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭৪ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৬৭ পয়সা।
পুঁজিবাজারে ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর শেয়ারসংখ্যা দুই কোটি ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সরকারের কাছে দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।