নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েক দিনের বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সবজির বাজারগুলোয়। সবজিভেদে দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে আবারও বাড়ছে ডিমের দাম। অন্যদিকে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনও চড়া।
সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির ফলে অনেক সবজি পচে গেছে, তাই দাম বেড়েছে। তবে বৃষ্টি হোক বা না হোক, দাম সবসময়ই বেশি থাকে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি শুধু অছিলা মাত্র। তারা শুধু সময়ের অপেক্ষায় থাকে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা ও তেজতুরী বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বেগুন ১০০, কচুর লতি ৮০, মুলা ৬০, শসা ৭০, উচ্ছে ৮০, করলা ৮০, ঢেঁড়স ৬০, পটোল ৬০, টমেটো ১২০, শিম ১৬০, কচুর মুখি ৬০, পেঁপে ৩০, চিচিঙ্গা ৬০ ও বরবটি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে লাউ প্রতিটি ৬০, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতিটি ৫০ ও চালকুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা হিসেবে এবং মিষ্টিকুমড়ার ফালি ৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর কাঁচকলা ৪০ ও লেবু ৩০ টাকা হালি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা মনির বলেন, বৃষ্টির কারণে এ সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে দাম ২০-২৫ টাকা বাড়তি। বৃষ্টিতে সবজি পচে যায়, তাই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়, আমাদের কিছু করার থাকে না। কারওয়ান বাজার থেকেই কিনতে হয়েছে বেশি দামে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আনান বলেন, এ সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে অনেক। ৫০০ টাকা আনলে ৬/৭ ধরনের বেশি সবজি কেনা যায় না। দোকানিরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দাম বাড়তি। আমাদের কিছু করার নেই। আমরা নিরুপায়।
এদিকে হঠাৎ ফের বেড়েছে ডিমের দাম। পাড়া-মহল্লার দোকানে লাল ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। একটি ডিমের জন্য ক্রেতাদের সর্বনিন্ম গুনতে হচ্ছে ১১ টাকা ২৫ পয়সা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে। কবে কমবে দাম নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
জানা যায়, তিন দিনের ব্যবধানে লাল ডিমের ডজনে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। বর্তমানে বাজারে লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়, হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। গত শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোয় লাল ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছিল ১৪০ টাকায়। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ছিল ২০০ টাকা।
পল্লবী এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা ডিমের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, সবকিছুর দাম এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মানুষ এখন ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় গরিব মানুষ অনেকে ডিম খাওয়া ছেড়ে দেবেন। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে।
একই এলাকার পাটোয়ারী জেনারেল স্টোরের মালিক আবু বকর সিদ্দিক পিন্টু পাটোয়ারী বলেন, গত তিন দিনের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির হালিতে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। লাল ডিমের হালি বিক্রি করছি ৪৮ টাকায়। আগামীকাল আবারও ডিমের দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে, কত বাড়বে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
কালশী বাজারের ডিম বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, লাল ডিমের হালি বিক্রি করছি ৪৫ টাকায় এবং ডজন বিক্রি করছি ১৪৫ টাকায়। পাইকাররা সুযোগ পেলেই ডিমের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রমজান বলেন, পাইকারদের অজুহাতের শেষ নেই। গত মাসে জ্বালানি তেল ও উৎপাদনের কথা বলে ডিমের দাম বাড়িয়ে ছিল। এবার বলছে সাপ্লাই আর বৃষ্টির কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। এছাড়া রয়েছে জ্যামের অজুহাত। পাইকাররা বলছে, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ডিম সময়মতো বাজারে আসছে না। সরকার যদি কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আবার ডিমের দাম কমে আসবে।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের ডিম বিক্রেতা আশিক বিল্লাহ বলেন, বৃষ্টি আর উৎপাদন কমের অজুহাতে বেড়েছে ডিমের দাম। সিন্ডিকেট বাড়াচ্ছে ডিমের দাম। সরকার আবার ব্যবস্থা নিলে ডিমের দাম কমে যাবে।
এদিকে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। অধিকাংশ মাছ আসছে সাগর মোহনা থেকে। সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় খুব একটা ইলিশের দেখা মিলছে না। গত এক মাসের তুলনায় ঘাটে ইলিশের আমদানি বাড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এর আগে ৪০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ আসত ঘাটে।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আগের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর। প্রতিটি আড়তের সামনে ইলিশের স্তূপ। পাশেই বরফ ভেঙে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চল ও সাগর মোহনার প্রচুর ইলিশ মাছঘাটে আসছে। ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। কেউ বলছেন দাম কমেছে, আবার কেউ বলছেন দাম বেড়েছে।
স্থানীয় ক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় মাছঘাট চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট। এখানে এসে দেখলাম মাছের দাম গত বারের চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে বলছেন, চাঁদপুর ইলিশে সয়লাব। আসলে কথাটা সত্য নয়। মাছ আছে, কিন্তু দাম অনেক বেশি। চাঁদপুরের লোকাল মাছ এখানে সীমিত। বরিশাল, ভোলা ও হাতিয়া থেকে আসা ইলিশে সয়লাব। আমি এখানে ঘুরে ঘুরে মাছ দেখেছি, কিন্তু এখনও মাছ কিনতে পারিনি। আমার আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাছ কিনতে পারিনি। চাঁদপুরের লোকাল মাছের দাম এখনও বেশি, এক কেজি মাছ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা।
আরেক ক্রেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে প্রায়ই মাছ কিনতে আসি। গত পরশু আমি এখান থেকে মাছ কিনেছি। বর্তমানে মাছের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। আমি বাজেট অনুযায়ী আজও কিছু মাছ কিনব।
মাছ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে এক কেজি থেকে এক হাজার ১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা ছিল। আর এখন একই ওজনের মাছ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ। আশা করি এর ভেতরে আমদানি বেশি হলে মাছের দাম আরও কমবে।
আরেক ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদ মাহিন বলেন, মাছের আমদানি মোটামুটি বেড়েছে। ভোলা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম থেকে আসা ছোট ছোট ইলিশ মাছের আমদানি বেড়েছে। বড় মাছ যে পরিমাণ বেড়েছে, তার তুলনায় চাহিদা ও দাম বেশি। এগুলো চাঁদপুরের মাছ। পূজা উপলক্ষে ভারতের বর্ডার খুলে দেয়ায় ভারতীয়রা চাঁদপুরের ইলিশ মাছ সংগ্রহ করছেন, যার কারণে এর দাম বেড়েছে।