ফের বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই যমুনা ও তিস্তার পানি, নিন্মাঞ্চল প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে আবারও সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে ফের বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণের ব্যারাজে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, টানা আট দিন পানি কমার পর গত চার দিনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৪৫ সেন্টিমিটার ও কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে যমুনা নদীর পানি। এতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।

এদিকে এরই মধ্যে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোয় বসতভিটা ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তবে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।

গতকাল সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুরে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই চার দিনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীতীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বসতভিটা ছেড়ে অন্য স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যাকবলিতরা। এসব এলাকার তিল, আখ, বীজতলাসহ সবজি বাগান তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার বলেন, পাহাড়ি ঢল ও উজানের ভারী বর্ষণে চার দিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী দুই-তিন দিন আরও পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ভারী বন্যার আশঙ্কা নেই।

এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে ফের বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণের ব্যারাজে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫২ পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিকেল ৩টার দিকে ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, ফলে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

এক দিন পর আবারও তিস্তার পানি বেড়ে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করছে। চরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এক দিন যেতে না যেতে তিস্তার পানি বাড়ায় ফের দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী রাশেদিন ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুর থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কী পরিমাণ পানি আসছে, সেটি বলা যাচ্ছে না।

পানি বাড়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানি, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, বাকডোরা, কালমাটি রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবারও পানি প্রবেশ করছে।

গড্ডিমারি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) জাকির হোসেন বলেন, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার এক দিন পর ফের নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নদী পাড়ের মানুষ আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন।

দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে দহগ্রাম ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। শনিবারে পানি বৃদ্ধির ফলে আদর্শ গ্রাম যাওয়ার রাস্তাটি পানির তোড়ে ভেঙে গেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০