নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত লোকসানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবুও কোম্পানিটির শেয়ারদরে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যমতে, গতকাল মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ ২৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। কোম্পানিটির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে দুই টাকা দুই পয়সা বা ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারদর বেড়ে সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করে। এদিন কোম্পানির শেয়ারে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৫ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বনি¤œ ছিল ২০ টাকা ৭০ পয়সা। এর আগে গত ১২ এপ্রিল কোম্পানির শেয়ার ২২ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এরপর থেকে টানা বাড়ছে কোম্পানির শেয়ারদর। এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ আট টাকা ৭০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৩৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
এর আগেও একাধিকবার কোম্পানিটির শেয়ারদরে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের নভেম্বরের শুরু থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। ওই সময় কোম্পানির শেয়ার ১১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ৩২ টাকা ৯০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। ওই সময় কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে নোটিস প্রদান করে কোম্পানিকে। জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দর বাড়ার কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ফের কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে।
এ সম্পর্কে কোম্পানি সচিব আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দার পর চলতি মাসের শুরুতে বাজার কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এর মধ্যে লোকসানি কোম্পানির দর বাড়ায় তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তারা বলেন, উত্থান ও পতনমুখী বাজারে কিছু দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়। এসব কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়মিত তদারকি করলেই বেরিয়ে আসবে কী কারণে দর বাড়ছে। এর পেছনে কোনো অসৎ চক্র থাকলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। যা গতিশীল বাজারের সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে মাঝেমধ্যে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়। এসব কোম্পানি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সচেতন থাকা উচিত। এতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১০ পয়সা; আগের বছর একই সময় লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯ পয়সা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ ছিল ২০ পয়সা; আগের বছর একই সময় লোকসান ছিল ১৯ পয়সা। কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটি প্রায় এক যুগ ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৫০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে আছে ৫০ শতাংশ শেয়ার।
ফের মেঘনা পিইটি’র শেয়ারদরে উল্লম্ফন
