অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ:পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক এখন আর আবর্জনা নয়। ব্যবহার ও প্রয়োজনের পর সাধারণত ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের সামগ্রীকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে গড়ে উঠেছে মেসার্স জিব্রাইল ট্রেডার্স প্লাস্টিক কাটিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং ফ্যাক্টরি। সেই প্লাস্টিক কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন টেবিল, চেয়ার, বোতল ও পানির পটসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র। ফেলে দেয়া সেসব প্লাস্টিক মেশিনে ভাঙিয়ে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে কারখানার মালিক নিজের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি তৈরি করেছেন একশ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান।
জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন হাট, বাজার, ছোট ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে ব্যবহারের পরে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ৪০ টাকা কেজি দরে সদর উপজেলার চক-শিয়ালকোলে ৩ বিঘা জমির ওপরে গড়ে তোলা জিব্রাইল ট্রেডার্সের কাটিং কারখানায় বিক্রি করছে। পরে সেই বোতলজাত প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিক এই কাটিং সেন্টারে কাটা হয়।
গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের চক শিয়ালকোলে গড়ে ওঠা মেসার্স জিব্রাইল ট্রেডার্স প্লাস্টিক কাটিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা কর্মব্যস্ত। কেউ বোতল পানিতে ধুয়ে কাটিং করে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউবা বোতলগুলোর ছিপি খুলছেন। সেগুলো আবার কাটিং মেশিনে দিয়ে কাটছেন। প্রতিদিন ১০০ জন শ্রমিক ২৭০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন।
প্লাস্টিক কাটিং কারখানায় কাজের ফাঁকে কথা হয় আলেয়া খাতুন ও মনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে। তারা বলেন, পুরোনো প্লাস্টিক বোতল কাটিং করার পর পানিতে ধোয়ার কাজ করে দিনে ২৭০ টাকা মজুরি পান। শুধু আলেয়া ও মনোয়ারা নয়, তার মতো অনেক শ্রমজীবী নারী এ কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কারখানার টেকনিশিয়ান মায়দুল ইসলাম জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। এই উপার্জিত অর্থে তার সংসার বেশ ভালোই চলছে। এখানকার কাটিং প্লাস্টিক ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। রাস্তায় ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়ে চেয়ার, টেবিল, বোতল, পানির পট, মুরগির পানির টবসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। বিদেশে এগুলো দিয়ে তুলাও তৈরি হয়ে থাকে।
কারখানার শ্রমিক আল-আমিন, হাসান, সাগরসহ শ্রমজীবী আরও কয়েকজন বলেন, আমরা প্লাস্টিক বাছাই করি, পরে সেগুলো মেশিনে দিয়ে কাটিং করাসহ নানা ধরনের কাজ করি। এতে প্রতিদিনে শ্রম বিক্রির শেষে আমাদের সংসার চলে।
মেসার্স জিব্রাইল ট্রেডার্স প্লাস্টিক কাটিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী জিনহার আলী বলেন, পুরোনো জিসিনপত্রে ভাঙড়ির ব্যবসা বাবার কাছ থেকে শিখেছি। আগে ছোট পরিসরে ছিল। এখন আস্তে আস্তে বেশ বড় হচ্ছে। আমরা মূলত ফেলে দেয়া পুরোনো প্লাস্টিক কাটিং করি। তারপর বস্তা ভর্তি করে ট্রাকে ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করি। এগুলো দেশের বাইরেও চলে যায়। আমার এখানে বর্তমানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ১০০ জন নারী-পুরুষ। তবে সরকারি সহায়তা পেলে ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের পণ্যেই অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে তিনি জানান।