ফেসবুক-ইউটিউবের সাড়ে ৮ হাজার লিংক অপসারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২ সালে ফেসবুক থেকে ৮ হাজার ২২৮টি ও ইউটিউব থেকে ২২২টি লিংক সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গতকাল বিটিআরসির উদ্যোগে ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দিনব্যাপী যুব কর্মশালা ও আলোচনা সভায় তিনি একথা জানান। উপস্থাপনায় তিনি ২০২১ ও ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় অপসারিত লিংকের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালে ফেসবুক থেকে ৮ হাজার ৯১৬টি ও ২০২২ সালে ৮ হাজার ২২৮টি লিংক অপসারিত হয়েছে। ২০২১ সালে ইউটিউব থেকে ১ হাজার ১৩টি ও ২০২২ সালে অপসারিত হয়েছে ২২২টি লিংক।

২০২২ সালে টিকটক থেকে ১ হাজার ১৫৯টি লিংক, ২০২২ সালে বিগো, লাইকি ও ইমো থেকে ৬৭টি এবং টুইটার থেকে সরানো হয়েছে ২৯টি লিংক। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশ্বে চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি সাইবার আক্রমণের ঘটনায় বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছেÑউল্লেখ করে নাসিম পারভেজ বলেন, ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন হয়রানির হার ছিল ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আপত্তিকর ছবি ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সাইবার বুলিং ৫০ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ২০২২ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন হয়রানির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আপত্তিকর মেসেজ ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও সাইবার বুলিংয়ের হার ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ওয়েবসাইট/ডোমেইন থেকে লিংক অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে ১,২৩৫টি। এর মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে ১,২৩৫টি, অপসারণের হার শতভাগ। ২০২২ সালে ওয়েবসাইট/ডোমেইন থেকে লিংক অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে ৬৪৫টি। এর মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে ৬৪৫টি, অপসারণের হার শতভাগ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন এবং জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যক্তি সচেতন না থাকলে সাইবার জগৎকে নিরাপদ রাখা খুব কঠিন। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক জারিকৃত ২৯টি ক্রিটিক্যাল অবকাঠামো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য প্রাপ্তিতে কোনো বাধা নেই। শিশু-কিশোরদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইন অনুসরণের পরামর্শ দেন মন্ত্রী।

কম্পিউটার তথাপ্রযুক্তি ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের বিরত না রেখে বরং তাদের নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রযুক্তি বিষয়ে তেমন দক্ষ না হওয়ায় সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে টেলিযোগাযোগ সেবা ও সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাইবার-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে সচেতনতা ক্যাম্পেইন করলে তা ফলপ্রসূ হবে এবং এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।

কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বহুল আলোচিত ও বিশ্বের প্রতিটি দেশই সাইবার অপরাধ-সংক্রান্ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তরুণ সমাজ যাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হয়, সে বিষয়ে অধিক প্রচার-প্রচারণা ও কর্মশালা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের বড় প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের সম্মুখীন হলে সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে ঘটনাটি গোপন রাখে; ফলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সাইবার সচেতনতা ও সুরক্ষার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবেÑউল্লেখ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম. বরকতউল্লাহ বলেন, আগামীতে সক্ষম ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজস্ব প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি-সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নের জোর দেয়া হচ্ছে। কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ফিশিং, হ্যাকিং ও সাইবার পর্নোগ্রাফির শিকার বেশি হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোয় মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত ঘটনায় অপরাধের হার বেশি হলেও বর্তমানে তা অনেকাংশ কমে গেছে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো. নুরুল হাফিজ এবং যুব কর্মশালায় অংশ নেয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০