ফেসিয়াল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত (ড্যামেজ) হওয়ায় মুখের পেশির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা ফেসিয়াল পালসি বলা হয়। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসা ৭ নম্বর ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলা হয়। এটি মুখের মাংসপেশির নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
মস্তিষ্ক থেকে শুরু হওয়ার পর এই নার্ভ দীর্ঘপথ অতিক্রম করে কানের পেছন দিয়ে মুখমণ্ডলে প্রবেশ করে। এই গতিপথের যেকোনো জায়গায় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোনো কারণে এটি যখন আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায়, তখনই তা ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা পালসি। জন বেল রোগটি প্রথম আবিষ্কার করেন বলে একে ‘বেলস পালসি’ও বলা হয়।
বেলস পালসি যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষের হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের রোগটি বেশি দেখা যায়।
কেন হয়: বেলস পালসি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন: ১. ভাইরাস সংক্রমণ, ২. মধ্যকর্ণে সংক্রমণ, ৩. ঠাণ্ডার কারণে, ৪. আঘাতের কারণে, ৫. মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, ৬. টিউমার, ৭. কানের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি প্রভৃতি।
কীভাবে বুঝবেন: আক্রান্ত রোগীর মুখ একদিকে বেঁকে যায়। আক্রান্ত পাশের চোখ বন্ধ হয় না এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কুলি করতে গেলে পানি অন্য পাশে চলে যায় বা পানি গড়িয়ে পড়ে। খাবার গিলতে কষ্ট হয়। কপাল ভাঁজ করতে পারে না। অনেক সময় কথা বলতে কষ্ট হয়।
শনাক্ত: ফেসিয়াল পালসি নির্ণয় করতে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগীর ইতিহাস জানা যথেষ্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী দেখেই নির্ণয় করা সম্ভব, কিন্তু অনেক সময় কারণ জানতে প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসা: এই রোগের চিকিৎসাকরণের ওপর নির্ভর করে। ফেসিয়াল পালসির চিকিৎসার জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড হলো সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। তবে সুফল পেতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি সন্দেহ হয়, কোনো ভাইরাস এ রোগের কারণ, তাহলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেয়া হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেশির ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয়। মারাত্মক ক্ষেত্রে, যেখানে ট্রমার কারণে স্নায়ু সংকুচিত হয়ে যায় বা আক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
নিউরোসার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ