শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ব্যবসাবান্ধব সহজ আইনের কথা বিবেচনা করে দেশের অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করতে ফরাসি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
প্যারিসে ফরাসি সিনেট কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ-ফ্রান্স ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সূত্র: বাসস।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব এফডিআই আইন, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, সহজে রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বেতনে দক্ষ জনশক্তির সহজলভ্যতা বজায় থাকায় ফরাসি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে ঢাকাকে পছন্দ করতে পারে।’
মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের সাফল্য এবং উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার রোডম্যাপের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়েই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, কেউই পিছিয়ে পড়ছে না।’
অর্ধ-দিবসব্যাপী চলা ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স উভয় দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিআইডিএ), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথোরিটি (বিইজেডএ), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটি ও সংশ্লিষ্ট ফরাসি সংস্থাগুলো অংশ নেয়।
অর্থনৈতিক কূটনীতির বিষয় তুলে ধরতে ও বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর ফের আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করতে ইউরোপের চার দেশ সফরের অংশ হিসেবে মোমেন বর্তমানে চার দিনের সফরে প্যারিসে রয়েছেন।
ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, ফ্রান্স সিনেটের সিনেটর জ্যাকি ডেরোমেডি ও আর জেরোমি ডুরেই এবং ফ্রেঞ্চ মিনিস্ট্রি অব ইউরোপ, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস, ফ্রেঞ্চ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি, বিজনেস ফ্রান্স ও এমইডিইএফ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরাও ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সফরকালে মিনিস্ট্রি ফর ইউরোপ ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি জিন ব্যাপ্টিস্ট লেমোইনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফ্রান্সের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দায়িত্বে থাকা ওই প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটি তুলে ধরে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর প্রতি রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ ভূমি রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যে সুযোগ দিচ্ছে, তা প্রত্যক্ষ করার জন্য ফরাসি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক অবস্থান গ্রহণের জন্য স্টেট সেক্রেটারি লিমোইনে ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন। আগামী বছরের গোড়ার দিকে ফ্রান্সের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসবেন বলেও জানান।
দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়।
বাংলাদেশ-ফ্রেঞ্চ ইকোনোমিক ফোরামে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ফ্রেঞ্চ সিনেটে পৌঁছালে ফ্রান্স-সাউথ ইস্ট এশিয়া ইন্টার-পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সভাপতি সিনেটর জ্যাকি ডারমোনি তাকে অভ্যর্থনা জানান। ফেঞ্চ সিনেটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বিজনেস ফ্রান্স অ্যান্ড দ্য এজেন্সি ফ্রানওরেইসে ডি ডেভেলপমেন্টে (এএফডি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরিতে ঢাকাকে সহয়তা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ‘বিনিময়ে বাংলাদেশে ফ্রান্সের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরাই উপকৃত হবেন’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।