শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সে রেকর্ড দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশটির আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ, যা বার্ষিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এটি গত পাঁচ দশকের বেশি সময় থেকে রেকর্ড শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার দেশটির চতুর্থ প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫২ বছরের মধ্যে গত বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ছিল। খবর: গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিডের প্রভাব কাটিয়ে গত বছর ফ্রান্স আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ আগামী এপ্রিলে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশটির অর্থনীতি চাঙা রাখতে প্রেসিডেন্ট নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন, যার কারণে কভিড মহামারির নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে গত বছরের শেষ দিকে অর্থনীতি সচল থাকে। ফলে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশটির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোজেনের মধ্যে ফ্রান্স গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শূন্য দশমিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা দেশটির তৃতীয় প্রান্তিকের চেয়ে কিছুটা কম হলেও ইউরোজোনের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্টেটিস্টিকস অ্যান্ড ইকোনমিক স্টাডিজের (আইএনএসইই) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত প্রান্তিকে রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা ছিল শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, কিন্তু অর্থনীতিবিদদের সেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা ২০২১ সালের সাত শতাংশ সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এর ফলে ১৯৬৯ সাল থেকে গত ৫২ বছরে ফরাসি অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধির রেকর্ডে ভাগ বসাল, যদিও কভিড মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে দেশটির আর্থিক প্রবৃদ্ধিতে আট শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ফলে দেশটির সরকার দ্রুত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়ার ফ্রান্স টেলিভিশন-২-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ফরাসি অর্থনীতি চমৎকারভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং এটি অর্থনৈতিক সংকটকে মুছে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, এখনও কিছু খাতে সমস্যা রয়ে গেছে, যেমন আমাদের পর্যটন ও হোটেল খাতে এখনও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বেশিরভাগ খাতেই ভালোভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান বেড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের আবারও কভিডের কঠোর স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে, কারণ ফ্রান্স এখন কভিডের পঞ্চম ঢেউ অতিক্রম করছে, যেখানে কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
এদিকে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে। গতকাল দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অধিদপ্তর এ তথ্য জানায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি ১১ বছরের শীর্ষে: এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর বেড়েছে ভোক্তা ব্যয়, রপ্তানি বাণিজ্য ও ভবন নির্মাণ-সম্পর্কিত কার্যক্রম। ফলে বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম। একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ২০২১ সালে প্রসারিত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি। যদিও কভিড মহামারির কারণে দেশটির পরিষেবা খাত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এর আগের বছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক সাত শতাংশ হতে পারে, কিন্তু বছর শেষে সে পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে প্রবৃদ্ধি।