ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো অনলাইন গেম বন্ধ করুন

খুলছে স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, তবে ক্ষতিকারক অনলাইন গেমসগুলো কিন্তু এখনও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কভিডকালীন এ দেশে কিশোর-তরুণদের মধ্যে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্ল্যানস, মাইন ক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গ্লোবাল অফেন্স, কল অব ডিউটি ওয়ার জোনের মতো সহিংসতাপূর্ণ গেমগুলো। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় একটি  গেরিনা ফ্রি ফায়ার (ফ্রি ফায়ার ব্যাটল গ্রাউন্ডস বা ফ্রি ফায়ার নামেও পরিচিত)। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ার গুগল প্লে স্টোরে ১ বিলিয়ন ডাউনলোড রয়েছে। তরুণদের বেশিরভাগই আকৃষ্ট ফ্রি ফায়ার, পাবজি নামক আরও যেসব ক্ষতিকর অনলাইন গেমস রয়েছে সেগুলোয়। গেমারদের মতে, এই গেমসে যে একবার খেলা শিখে যায়, তার কাছেই প্রিয় হয়ে যায় গেমসটি, মানে এই গেমস খুব সহজেই গেমারকে আসক্ত করতে সক্ষম। শুধু আসক্ত নয় এই গেমসের কারণে আত্মহত্যা করেছে এমন খবরও কম নয় বাংলাদেশে। ধারণা করা যায়, এই গেমসে আসক্ত গেমাররা একদিন না খেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু একদিন গেমস না খেলে থাকতে পারবে না। অনেকে তো জীবনের লক্ষ্যই যেন বানিয়ে ফেলেছে এই গেমসকে। অনেক গেমার বলে থাকেন, এসব নাকি তাদের মাদক ও ইভটিজিং থেকে বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু গবেষণায় এই কথাটার সত্যতা পাওয়া যায় না; কারণ মাদক ও ইভটিজিং এই গেমসের ফলে কমে যায়নি। গেমসগুলো তরুণ সমাজকে সরিয়ে রাখছে সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ থেকে, যেখানে একটি দেশের শক্তি এবং সম্পদ হয় সমাজের তরুণরা, সেখানে এ ধরনের গেমস তরুণ সমাজকে সমাজের বোঝা বানিয়ে ফেলছে না তো! শুধু সামাজিক দিক নয় পারিবারিক দিক থেকেও অনেক পরিবারেই অশান্তির সৃষ্টি করে পাবজি ফ্রি ফায়ারের মতো গেমসগুলো।  ধর্মীয় দিক থেকে দেখলে তা ক্ষতিকারক হচ্ছে, কারণ ধর্ম থেকেও শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে এসব গেমের নেশায়। ফলে সমাজে নৈতিক শিক্ষার অভাবে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি। অভিভাবকদের মতও এই গেমস বন্ধ করার পক্ষে; কারণ তাদের পক্ষেও এই গেমস থেকে সন্তানদের সরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না, গেমসের জন্য পিতামাতার অবাধ্য হচ্ছে অনেকেই, এমনকি অনেক শিশুরাও এই গেমস খেলার জন্য, স্মার্ট ফোন কিনে দিতে বাধ্য করছে পিতামাতাকে, প্রয়োজনে দেয় আত্মহত্যার হুমকি।  যদিও সামর্থ্য না থাকে, তবুও মেনে নিতে বাধ্য হতে হয় অনেক পিতামাতাকে। আর কভিডকালে অনলাইন ক্লাসের অজুহাতে অনেক শিশু-কিশোরদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে স্মার্টফোন, যা দিয়ে আসক্তরা অনলাইন ক্লাস না করলেও ফ্রি ফায়ার অথবা পাবজি খেলা মিস করত না। ২০২১ সালে ১৬ আগস্ট এসব গেমস সাময়িকভাবে বন্ধের নোটিস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে বাংলাদেশ থেকে ব্যান করা হলেও ভিপিএন ব্যবহার করে এখনও গেমসটি খেলা যাচ্ছে। বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় বলেছেন, “আমাদের ক্যাশ সার্ভার ও চ্যানেলে যেগুলো ছিল, সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু ভিপিএন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, ভিপিএন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভবও না। কারণ ভিপিএনে যে শুধু গেম খেলা হয় তা কিন্তু নয়, এখানে অনেক অর্থনৈতিক বিষয়ও আছে। এ ছাড়া আমাদের সঙ্গে তাদের এমন কোনো চুক্তি নেই, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে হয়।

তবে শিগগিরই যদি এই গেমস স্থায়ীভাবে বন্ধের কোনো উপায় না পাওয়া যায়, তবে তা তরুণ সমাজেকে নিয়ে যাবে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহারে তরুণদের মধ্যে যে শারীরিক সক্রিয়তা কমে, তাতে অকালমৃত্যু, ডায়াবেটিস, মানসিক রোগ, হƒদরোগ ও নানা ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ২২ তারিখ থেকে পুনরায় খুলছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তবে ফ্রি ফায়ার, পাবজির মতো গেমসগুলোয় আসক্ত শিক্ষার্থীরা কি পারবে গেমসের চেয়ে বেশি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে? আর যেখানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যদি এ গেমসে আসক্ত হয় তবে এ দেশের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কি আলোর দেখা পাবে? না এসব গেমসে আসক্ত হয়ে কখনোই সুস্থ স্বাভাবিক হাসি-খুশি থাকা সম্ভব নয় এবং একটি সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার পথে এসব গেমস বিষাক্ত কাঁটার মতো একটা ফাঁদ। তাই যত দ্রুত সম্ভব শিশু-কিশোরসহ তরুণ সমাজকে এসব গেমসের হিংস্র থাবা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে।

হালিমা বিবি

শিক্ষার্থী, ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট

কল্যাণপুর, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০