‘ফ্রি বেডে’র বিধান মানছে না বেসরকারি হাসপাতাল

নাজমুল হুসাইন: গরিব রোগীদের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মোট শয্যার ১০ শতাংশ ‘ফ্রি বেড’ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। তবে এ আইন মানে না অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাস্তবে দেশের বড় বড় মেডিক্যাল হাসপাতালেও নেই এমন সেবা।

‘হেলথ বুলেটিন-২০১৬’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের ১৮১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ফ্রি বেড রয়েছে মাত্র ৩১টিতে। অর্থাৎ ১৫০টিতেই এই সুবিধা নেই। এ সেবা নেই অনেক মেডিক্যাল কলেজেও। আবার সুবিধা আছে এমন হাসপাতালগুলোতেও ফ্রি বেড পর্যাপ্ত নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালায় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবে বলা আছে, হাসপাতাল-ক্লিনিকে ১০ শতাংশ বেড গরিবদের জন্য ফ্রি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। লাইসেন্স গ্রহণের সময় এ অঙ্গীকার করে অনুমোদন নেয় সবাই। তবে পরে এই নির্দেশনা আর মানা হয় না।

সারা দেশে ছোট-বড় শুধু নয়, রাজধানীর নামিদামি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও নেই ফ্রি বেডের সুবিধা। আবার অনেক হাসপাতালে কাগজে-কলমে ফ্রি বেডের সুবিধা থাকলেও বাস্তবে সেই সুবিধার বালাই নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি থাকার সুবিধা দিলেও অন্যান্য খরচ নেওয়া হচ্ছে বেশি। দেশের প্রথম শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৫০০টি রোগী শয্যা। কিন্তু ১০ শতাংশ হিসেবে ৫০টি ফ্রি বেডে চিকিৎসা দেওয়ার নজির পাওয়া যায় না।

এ অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আকাশছোঁয়া ফি’র কারণে প্রয়োজন সত্ত্বেও গরিব রোগীরা সেসবে যেতে সাহস পান না। কেন ১০ শতাংশ ফ্রি বেড গরিব রোগীরা পাচ্ছেন না এ প্রশ্নের জবাবে একাধিক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মালিক জানান, অধিকাংশই এসব শর্ত মানছেন। যারা মানছেন না, তারা মুনাফা বাড়াতে এমনটি করছেন। আবার অনেকক্ষেত্রে ১০ ভাগ ফ্রি বেড দিলে কুলানো যায় না। আবার মাঝে-মধ্যে হাসপাতালগুলোয় গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তবে কিছু ক্ষেত্রে উল্টো চিত্রও রয়েছে। সেবার ব্রত নিয়ে কিছু হাতেগোনা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ফ্রি বেডে গরিব রোগীদের সেবা দিচ্ছে। তথ্য অনুসারে, ঢাকা আইসিডিডিআর,বি (কলেরা হাসপাতাল) তাদের ৩০০ বেডের মধ্যে ৩০০টিতেই ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেডের মধ্যে ২৯০টিতে ফ্রি বেড সুবিধা দেওয়া হয়। বারডেমের ৫৯৬ বেডের মধ্যে ১১৮টি, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে ২৫০-এর মধ্যে ৭৫টি, সিরাজগঞ্জে নর্থ বেঙ্গল অ্যান্ড এমসি হাসপাতালে ৪০০টির মধ্যে ১২০টি, ঢাকার উত্তরায় শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেডের মধ্যে ২০০টি, উত্তরা ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪০০ বেডের মধ্যে ৮০টি, সিরাজগঞ্জের বিএনএসপি হাসপাতালে ১০০ বেডের মধ্যে ২০টি ফ্রি বেডের সুবিধা রয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) একেএম সাইদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘১০ শতাংশ ফ্রি বেড দেওয়ার বিধান থাকলেও ক্লিনিক বা হাসপাতালের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। মেডিক্যাল কলেজ মালিকরা যেন গরিবদের ফ্রি বেডে চিকিৎসার সুযোগ দেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু এ বিষয়টিই নয়, সবকিছুই শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, ফ্রি বেড দেওয়ার বিধান থাকলেও সেই বিধানে ত্রুটি আছে। গরিবদের ফ্রি বেড দেওয়া হলেও তাদের অন্যান্য চিকিৎসা খরচ কে বহন করবে, সে সম্পর্কে নীতিতে কিছু বলা হয়নি। এতে একটি বড় ফাঁক রয়ে গেছে। এছাড়া কে তা দিচ্ছে, আর কে দিচ্ছে না, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গরিবের জন্য ফ্রি বেড আছে, প্রচারের অভাবে এ তথ্যটি জানেন না অনেকেই।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০