ঘাড়ের জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ ফ্রোজেন শোল্ডার। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘শোল্ডার অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস’ বলা হয়। এক্ষেত্রে জয়েন্টের মধ্যকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থ কমে যেতে থাকে। ফলে শোল্ডার জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। এই রোগ ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়স, বিশেষ করে মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।
ঘাড় ব্যথার কারণ
একটানা অনেক ক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করলে
ঘুমানোর সময় বাজেভাবে শোয়ার জন্য
অতিরিক্ত স্ট্রেস
হঠাৎ খিঁচুনি ধরলে
ব্যথা বেড়ে গেলে
আদা খেলে আদার রস, আদা চা খেলে ফোলা কমে ব্যথা জলদি উপশম হবে। ঘাড়ের শিরা ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার উপশম হয়। ঘাড় রিল্যাক্স হয়ে আরাম পাবেন।
আর্নিকা ব্যথা কমাতে যে আর্নিকা কতটা উপকারী তা অল্প বিস্তার আমরা সবাই জানি। টাটকা আর্নিকা পাতার রস থেকে তৈরি করা হয় এই ওষুধ। ব্যথা কমানো, স্টিফ হয়ে যাওয়া ঘাড় থেকে আরাম পেতে আর্নিকা খুবই উপকারী।
মেন্থল ও কর্পূরÑব্যথা জায়গায় মেন্থল ও কর্পূর একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। ঘাড়ের পেশি শিথিল হয়ে ঠাণ্ডা অনুভূতি হবে। আরাম পাবেন।
ল্যাভেন্ডারÑপ্রাচীনকাল থেকেই ব্যথা কমানোর কাজে ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করা হয়ে এসেছে। ল্যাভেন্ডার অয়েল কিনে বাড়িতে রাখুন। ঘাড়ে ব্যথা হলে ল্যাভেন্ডার অয়েল লাগান। আরাম পাবেন।
স্নান হালকা গরম জলে সিদ্ধ লবণ মিশিয়ে চার-পাঁচ মিনিট স্নান করুন। স্নান করার সময় ঘাড় নাড়াচাড়া করবেন না। আস্তে আস্তে স্টিফ ঘাড় ঠিক হয়ে যাবে।
আইস প্যাক ঘাড়ের ব্যথা যদি অসহ্য হয়ে ওঠে তাহলে আইস প্যাক চাপা দিয়ে রাখুন। সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাবেন।
হিটিং প্যাড ঘাড়ের ওপর হিটিং প্যাড চেপে রাখুন। রক্ত সঞ্চালন বেড়ে ঘাড়ে ব্যথা কমবে।
প্রতিদিন যে কাজগুলো করলে ঘাড় ব্যথা থেকে রেহাই পাবেন
১. ম্যাগনেশিয়াম ট্যাবলেট রোজ ব্রেকফাস্টে একটা করে ম্যাগনেশিয়াম ট্যাবলেট খান।
২. ঘুম ঘুমানোর সময় খেয়াল রাখবেন যেন শোয়ার ধরন ঠিক থাকে। ভুল ভঙ্গিমায় শোয়ার জন্য ঘাড় ব্যথা হয়।
৩. ব্রেক অফিসে কাজ করতে করতে যখনই স্ট্রেস লাগবে, পাঁচ মিনিট ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসুন।
৪. ড্রাইভিং এক টানা অনেকক্ষণ ড্রাইভ করবেন না।
৫. স্ট্রেস যতটা সম্ভব নিজেকে স্ট্রেসমুক্ত রাখুন। স্ট্রেস বাড়লে ঘুম কম হবে, ক্লান্তি থেকে ঘাড়ে ব্যথা হবে।
শরীরচর্চা রোজ ঘুম থেকে উঠে ঘাড়ের হালকা ব্যয়াম করুন। তাহলে ঘাড় সচল থাকবে
ফ্রোজেন শোল্ডার কেন হয়
এই রোগের প্রধান কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমনÑ
ডায়াবেটিস থাকলে
ঘাড়ের জয়েন্টে আঘাত পেলে
কোনো কারণে জয়েন্টে অনেকদিন নাড়ানো না হলে
ফুসফুস, হƒৎপিণ্ডের বা হাতের অপারেশন হলে
থাইরয়েডে সমস্যা থাকলে
চিকিৎসা পদ্ধতি
ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর কাছে ব্যথা প্রধান সমস্যা মনে হলেও, এর মূল সমস্যা হলো জয়েন্টে শক্ত হয়ে যাওয়া। ব্যথার ভয় করে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখলে, জয়েন্ট তত বেশি শক্ত হয়ে যাবে। তাই রোগীকে বুঝাতে হবে, ব্যথার ওষুধের চেয়ে হাত নাড়ানোর চিকিৎসা করা বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার
কনসালট্যান্ট, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল
কাকরাইল, ঢাকা