Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:19 pm

ফ্লোর প্রাইসেও থেমে নেই বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে পতন থামছেই না। ফ্লোর প্রাইসেও বড় পতনের সম্মুখীন হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে প্রতিনিয়ত তাদের বিনিয়োগ কমছে এবং মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। যা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণের মতো বলে দাবি করছেন তারা। চলতি সপ্তাহে টানা তিন কার্যদিবস ধরে বড় পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এতে সূচক কমে চার মাসের আগের অবস্থানে নেমে গেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন রয়েছে তলানিতে। গতকাল বুধবার লেনদেন ছিল ৩৫০ কোটি টাকার ঘরে। কিন্তু এ পতনের কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছেন না কেউ। অনেকে এজন্য দেশের এবং বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনীতির মন্দাকে দায়ী করছেন। আবার কেউ দাবি করছেন, মার্জিন ঋণ নিয়ে কেনা শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বিক্রি করতে না পারছেন না, তারা সুযোগ পেলেই প্যানিক সেল বা সেল প্রেসার দিচ্ছেন। ফলে নির্দিষ্ট কারণ বা সমস্যা খুঁজে না পেলে এবং সেটার সমাধান করা না গেলে পুঁজিবাজার আরও বড় পতনের সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে আস্থা হারানোর কারণে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাজার থেকে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে জানান তারা।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে গত তিন কার্যদিবস ধরে পতন চলছে। তার আগে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ২৯৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। এরপর থেকে পতনের মাধ্যমে গতকাল সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২০ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। এতে তিন দিনে ৭৬ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট হারিয়েছে পুঁজিবাজার। গতকাল বুধবার লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এতে লেনদেন প্রায় গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। এর আগে গত ২৮ মার্চ সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছিল। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ২৭২ কেটি টাকার। এর পর লেনদেন বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু তা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি বাজার। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়, এর পর লেনদেন কমে সবশেষ ৩০০ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতার কারণে আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্যানিক সেল বা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। ফলে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। তাই কয়েকদিন ধরে বাজার শুরুর প্রথম দিক থেকে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা গেছে, যা শেষ পর্যন্ত বড় পতন ঘটিয়েছে। কারণ ফ্লোর প্রাইসে বিনিয়োগকারীরা যে অবস্থান নিয়েছিলেন তা আস্থা সংকটের কারণে ভেঙে পড়েছে।

তারা বলছেন, মার্জিন ঋণ যে বাজারে আছে, সে বাজারে ফ্লোর প্রাইস থাকলে কখনোই ভালো কিছু আশা করা যায় না। যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছেন, তাদের বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোরে আটকে আছে। ফলে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলতে পারছেন না এবং যেসব শেয়ারে লেনদেন করে স্বল্প সময়ে মুনাফা করার সুযোগ আছে সেগুলোয় বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এতে দীর্ঘদিন ফ্লোরে আটকে থাকায় এবং মার্জিন ঋণের সুদের কারণে শেয়ারের মূল্য কমে যাচ্ছে। ফলে সুযোগ পেলেই বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সেই সঙ্গে কী কারণে বাজারে পতন হচ্ছে তার নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পায়নি বিএসইসি। তাই যতদিন এর সমাধান করা হবে না, ততদিন এ বাজার ভালো হবে না। সেই সঙ্গে অতি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাজার আস্থা ও বিনিয়োগকারী হারাবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানান, বাজারে শেয়ারের দাম না কমলে, আর বিক্রি করে টাকা তুলতে না পারলে বাজারে কোনো গতি আসে না। বর্তমানে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই আস্থা সংকটে রয়েছেন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ করলে শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে গেলে বিনিয়োগ তুলতে পারবেন না বলে শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে ফ্লোরে আটকে আছেন। শেয়ার বিক্রি করে বের হতে পারছেন না। কিন্তু তার মার্জিনের সুদ বাড়ছে। ফলে যে শেয়ারে বিনিয়োগ করা আছে তার ভ্যালু কমে যাচ্ছে। বাজারে যদি কেনা-বেচা স্বাভাবিক থাকত, তাহলে শেয়ার কিনে সমস্যায় পড়তে হতো না। তাছাড়া শেয়ার বিক্রি করতে পারলে সুদের বোঝা চাপবে না। তাহলে বাজার ঘুরে দাঁড়াত বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে বাজারের এ পতনের কারণে ব্যাংক ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা এবং ১১টায় দুই দফায় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আজ সকাল ১০টায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং ফান্ড ম্যানেজারদের সঙ্গে করবে বিএসইসি। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। বেলা ১১টায় নির্ধারিত কিছু ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। সভায় বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।