ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১৫-২৫% কমে ব্লক মার্কেটে লেনদেন!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্টকের ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ারের লেনদেন হয় না। এসব শেয়ারের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ব্লকে শেয়ার বিক্রি করে। আর বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস বা নিম্নসীমার চেয়েও আরও ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ কমে বিক্রি করছে। এর মধ্যে ব্লকে ১০ শতাংশ কমে এবং বাকি টাকা নগদে বা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করছে। ফলে লেনদেনে সুবিধায় রয়েছে বড় ও প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীরা। বাজার দামের চেয়েও ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ কমে এসব শেয়ার কিনছে। আবার সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছে।

জানা যায়, কভিডকালে অস্বাভাবিক দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতা ঠেকাতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নিয়ম চালু করে বিএসইসি। এক্ষেত্রে কোনো শেয়ারের দামের ভিত্তি হবে আগের পাঁচ দিনের সর্বশেষ লেনদেনের (ক্লোজিং প্রাইস) গড় দর। এতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। কিন্তু দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দরপতন ঠেকাতে গত বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয় বিএসইসি। এখনও সেটি বহাল আছে। এর ফলে বর্তমানে দেড় শতাধিক কোম্পানির লেনদেন আটকে আছে। ফলে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত স্টকের ৫০ শতাংশের বেশি ক্রেতা না থাকায় শেয়ারের নিয়মিত লেনদেন হয় না। লেনদেনে সুবিধায় রয়েছে বড় ও প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীরা। বাজার দামের চেয়েও ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে এসব শেয়ার কিনছে। আবার সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের এ কাজে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকেন্দ্রিক এজেন্ট আছে। তারাই মূলত ক্রেতা-বিক্রেতার সংযোগ করিয়ে লেনদেন শেষ করছে। তারা কমিশন পাচ্ছে বলে জানা যায়। এ কারণে বর্তমানে বাজারে ব্লক মার্কেটকেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এতে আটকে পড়েছে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।

গতকাল রোববারের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ১৮১টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে ছিল। মূল মার্কেটে এসব কোম্পানির কোনো লেনদেন হয়নি। কিন্তু ব্লক মার্কেটে একমি পেস্টিসাইডের ১২টি অর্ডারে ১৪ লাখ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৯টি শেয়ার লেনদেন হয়। অপরদিকে সানলাইফের ২৬টি অর্ডারের এক কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৭৯৮টি শেয়ার লেনদেন হয়। অথচ সানলাইফের ইন্স্যুরেন্সের মূল বাজারের মাত্র ৫৭টি শেয়ার এবং একমি পেস্টিডাইডের মাত্র ১৫০টি মেয়ার লেনদেন হয়। আর সারা দিনে ব্লক মার্কেটে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ব্লকে শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন ছিল সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির।

নাম প্রকাশে একজন ব্যাংকার শেয়ার বিজের এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ব্লকে কিছু শেয়ারের বিক্রির জন্য ফ্লোরপ্রাইসের চেয়েও ২০ শতাংশ কমে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করি। এর মধ্যে ২৫ হাজার শেয়ার বিক্রি হয়। বাকি ৩৫ হাজার আগাম টাকা দিয়ে রেখেও বিক্রি করতে পারিনি। অথচ ব্লকে ১০ শতাংশ কম এবং নগদে ১০ শতাংশ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের অফার দিয়েও শেয়ার কেনার লোক পাইনি।

একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, মূল বাজারের লেনদেন নেই। অথচ ব্লক মার্কেটকেন্দ্রিক কিছু কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়, যা রহস্যজনক। মূলত কোনো কোম্পানির শেয়ারের অতিরিক্ত লেনদেন, ওই কোম্পানির শেয়ারে যাতে কোনো প্রভাব না ফেলে এজন্য ব্লক মার্কেট চালু করা হয়। এই মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা পূর্বনির্ধারিত। এখানে বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ শতাংশ কম বা বেশি দামে শেয়ার লেনদেন করা যায়।

নিয়ম অনুসারে কোনো বিনিয়োগকারীর পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ থাকলে ব্লক মার্কেটে লেনদেন করতে পারে। আর এ সুযোগ লুফে নেয় সিন্ডিকেট। তারা ব্লক মার্কেট থেকে ১০ শতাংশ কম ও অফসাইড ট্রেডিংয়ে আরও পাঁচ-দশ শতাংশ কম দামে শেয়ার কিনে মূল বাজারে তা ১০-২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করছে। এর সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০