Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:15 pm

ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন কর কমানোর প্রস্তাব রিহ্যাবের

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে ফ্ল্যাট-প্লটের নিবন্ধন কর কমানো এবং বিনা প্রশ্নে আগামী পাঁচ-দশ বছর আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। একই সঙ্গে রডের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে স্ক্র্যাপ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন। তবে বাজেটে প্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে, সুযোগ বন্ধ করলে টাকা পাচার হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে আবাসন খাতের সমস্যা সমাধান ও সার্বিক উন্নয়নে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।

রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া নিবন্ধন ব্যয় সাত শতাংশ করার প্রস্তাব করে বলেন, বর্তমানে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ব্যয় ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে গেইন ট্যাক্স চার শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি তিন শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি দুই শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর দুই শতাংশ ও মূসক তিন শতাংশ। সার্কভুক্ত দেশে নিবন্ধন ব্যয় চার থেকে সাত শতাংশ হলেও বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট নিবন্ধিত হয়নি। এছাড়া অসংখ্য ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় বছরের পর বছর নিবন্ধিত হচ্ছে না। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নিবন্ধন ব্যয় কমানো হলে প্রচুর রাজস্ব পাবে সরকার।

বিনা প্রশ্নে পাঁচ-দশ বছর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগের প্রস্তাব করে লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আবাসন খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। কয়েক বছর ধরে এ খাত লোকসান দিচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে প্রশ্ন করায় সেকেন্ড হোমের নামে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগে কোনো প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে করজালে চলে আসবে। দুদক ও এনবিআর থেকে প্রশ্ন তোলায় এ খাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নামমাত্র নিবন্ধন ব্যয় নির্ধারণের মাধ্যমে আবাসন খাতে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করে রিহ্যাব সহসভাপতি বলেন, নিবন্ধন ব্যয়, স্ট্যাম্প ডিউটি, গেইন ট্যাক্স মাত্র তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে করে দ্বিতীয়বার ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। একই সম্পত্তি বারবার হাতবদল হলে সরকার রাজস্ব পাবে এবং উন্নত দেশের মতো এ দেশে এ খাতের জন্য সেকেন্ডারি বাজার সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে তিনি সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎসে কর থেকে পাঁচ বছরের জন্য ডেভেলপারদের অব্যাহতি দেওয়াসহ ১২টি প্রস্তাব করে রিহ্যাব।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা জরিমানার মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ তো রয়েছে। আগামী বাজেটেও সেটা থাকবে। এ সুযোগ বন্ধ করে দিলে টাকা পাচার হয়ে যাবে। তবে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। ওয়ার্কিং গ্রুপ এ খাতের সমস্যা নিয়ে সুপারিশ দিলে সে অনুযায়ী কাজ করব। একই সঙ্গে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা প্রচলনের বিষয়ে দ্রুত পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও মেট্টোসেম সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে ৪০টি স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স প্রতিষ্ঠান আছে, যার মাধ্যমে ৭৫-৮০ শতাংশ উন্নত মানের রড উৎপাদিত হয়। দেশে প্রায় আড়াইশ স্টিল কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি কারখানা ৮০ শতাংশ স্টিল উৎপাদন করে। রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানি করতে হয়। বিশ্বে এ স্ক্র্যাপের দাম ১৩০ ডলার করে বেড়েছে। সেজন্য রডের দাম বেড়েছে। এ স্ক্র্যাপের আমদানি শুল্ক এক হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। এ শুল্ক কমানো হলে রডের দাম কমবে।

স্ক্র্যাপের শুল্ক কমানো হলে রডের দাম কমবে কি নাÑএনবিআর চেয়ারম্যানের এ প্রশ্নে শহীদুল্লাহ বলেন, দেশে বর্তমানে বছরে ৮৫ লাখ টন রড উৎপাদিত হয়, মেগা প্রকল্পে সরবরাহ করার পরও ৫০ লাখ টনের বেশি বিক্রি হয় না। স্ক্র্যাপের শুল্ক কমানোর আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, দেশে তিন কোটি মেট্রিক টন সিমেন্টের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে ভারত, ভুটান ও নেপালে সিমেন্ট রফতানি হচ্ছে। এ খাতের কাঁচামাল ক্লিংকার জিপসাম, সøাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও লাইমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। সেজন্য তিনি আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে এ খাতে অগ্রিম কর প্রত্যাহারসহ পাঁচটি প্রস্তাব করেন।