ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’

নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নয়ন কি? উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের পার্থক্য প্রায়োগিক অর্থে আসলে কি? আমাদের উন্নয়ন দর্শন কি? সেখানে কোন ক্ষত আছে কি? আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নয়নের জোয়ার ও অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন কি অর্থ বহন করে-তার দুর্দান্ত ব্যাখ্যা নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব্যে। উন্নয়ন কাদের জন্য করা হয়, কিভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া উচিৎ তা এই বইয়ের মূল আলোচ্য। বইটিতে উন্নয়ন দর্শন এবং উন্নয়ন বাস্তবায়নকে খাতভিত্তিক আঙ্গিকে অত্যন্ত ক্রিটিক্যালি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

‘উন্নয়নের জোয়ার’, ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন’, ‘উন্নয়নের মহাসড়ক’, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ এসব প্রপঞ্চের অর্থটা মানুষের জন্মে, বেড়ে উঠায়, যাপিত জীবনে, তার শিক্ষায়, চিকিৎসায়, কর্মসংস্থানে, নিরাপত্তায়, তার চারপাশের মাটি পানি বাতাস প্রাণ ও পরিবেশে ঠিক কি অর্থ বহন করে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে বইতে।

উন্নয়ন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ‘মানসম্পন্ন নিরাপদ পরিবেশবান্ধব সভ্য জীবনের জীবনের’ টেকসই সংজ্ঞা হয়ে উঠেছে কিনা তা বিভিন্ন প্রবন্ধের আলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে এবং সার্বিক অবকাঠামো দর্শনে কোন ক্ষত আছে কিনা, উন্নয়নের প্রপঞ্চ নির্মাণে রাজনৈতিক বাহাস ও স্ট্যান্টবাজির বিষয় আছে কিনা তা দেখিয়েছেন লেখক। বাংলাদেশের উন্নয়ন দর্শনে অনেক সত্য মিথ্যা ও মিথ আছে কিন্তু জীবন আছে কি?

‘টেকসই উন্নয়ন’ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নির্ভর দীর্ঘমেয়াদী বহুমাত্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা যার মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসান, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বিচার ব্যবস্থা, টেকসই অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণ ও পরিবেশগত সুরক্ষা ইত্যাদি বহুমাত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার দিক নিবিড়ভাবে যুক্ত। নাগরিকের জন্য নিবেদিত রাষ্ট্রের কর্ম পরিধি সমন্বিত এবং বহুমাত্রিক সাস্টেইনেবিলিটির তরে সাজাতে হবে।

রাষ্ট্রকে শুধু মাত্র আয়ের স্ফীতির (জিডিপি ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি) দিক থেকে নয়, বরং মানব সম্পদ, সমাজ ও পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি সাস্টেইনেবিলিটির দিক থেকে ভ্যালূ রয়েছে এমন সব বহুমাত্রিক উন্নতির বহুস্তরে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার দিকে দুরদর্শী হতে হবে যাকে আমরা বলছি ‘টেকসই উন্নয়ন।’ অর্থাৎ একটি দেশের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন ‘নাগরিক, সম্পদ, সমাজ ও পরিবেশের’ দীর্ঘমেয়াদি সাস্টেইনেবিলিটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া জরুরি।

টেকসই উন্নয়ন ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত- অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা! পুস্তকে বাংলাদেশের উন্নয়ন বয়ান, উন্নয়ন দর্শন এবং উন্নয়ন বাস্তবায়নকে খাতভিত্তিক আঙ্গিকে অত্যন্ত ক্রিটিক্যালি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। পুস্তকের প্রবন্ধ গুলোকে ছয়টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। অধ্যায় গুলো হচ্ছে- ১- উন্নয়ন, উন্নয়ন দর্শন, উন্নয়নের বয়ান এবং আন্তর্জাতিক সূচক। ২-বাজেট ক্রিটিক, করোনা অর্থনীতি ও দারিদ্র্য। ৩-উন্নয়ন অর্থনীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের বিবিধ বিষয়। ৪-কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, নদী পানি প্রাণ ও পরিবেশ। ৫-শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, খেলাধুলা, বিরাজনীতিকরণ এবং কূটনীতি। ৬-রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা।

‘উন্নয়ন’ বাংলাদেশে প্রবলভাবে একটি রাজনৈতিক ঘটনা। ‘উন্নয়নের জোয়ার’, ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন’, ‘উন্নয়নের মহাসড়ক’, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ এগুলা উন্নয়ন বিষয়ে এক একটা আলোচিত রাজনৈতিক শ্লোগান। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া’র অর্থটা মানুষের জন্মে, বেড়ে উঠায়, যাপিত জীবনে, তার শিক্ষায়, চিকিৎসায়, কর্মসংস্থানে, নিরাপত্তায়, তার চারপাশের মাটি পানি বাতাস প্রাণ ও পরিবেশে ঠিক কি অর্থ বহন করে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছি।

উন্নয়ন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ‘মানসম্পন্ন নিরাপদ পরিবেশবান্ধব সভ্য জীবনের জীবনের’ টেকসই সংজ্ঞা হয়ে উঠেছে কিনা তা বিভিন্ন প্রবন্ধের আলোকে উপস্থাপন করেছি। এখানে আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান, সরকারের উন্নয়ন বয়ান, বাংলাদেশের পরিসংখ্যান পরিস্তিতি নিয়ে প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবৃদ্ধি, জাতীয় আয়, উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা ভুলের উপর কিছু সমালোচনা মূলক রচনা পুস্তকে স্থান পেয়েছে। করোনা প্রভাব, লকডাউন, দারিদ্র্য পরিস্থিতি, জীবন ও জীবিকার চ্যালেঞ্জ গুলো আলোচনায় এসেছে।

ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো খাত, যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, মেট্রো রেল, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকার যানজটের ভবিষ্যৎ, মেইড ইন বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক গাড়ির স্বপ্ন কথা, মোবাইল ইন্টারনেটের মান, পদ্মা সেতু এবং বুলেট ট্রেনের বিষয় গুলো। বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য সবুজ বিদ্যুৎ এর ভবিষ্যৎ, ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল আমদানি পলিসি, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ঠেলা অটো গাড়ির ব্যাটারি দূষণ নিয়ে প্রবন্ধ আছে। প্রবন্ধ আছে সমুদ্রবন্দর বিমানবন্দর রেল বেসরকারি করণের বতর্ক নিয়ে। একটি প্রবন্ধ লিখেছি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

গুরুত্বপুর্ণ কিছু প্রবন্ধ যোগ করেছি কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন নিয়ে, ইটের ভাঁটা, আমিষ নির্ভর খাদ্য ঝুঁকি নিয়ে। সড়ক নিরাপত্তা, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে বইতে রয়েছে দুটি বিশেষ প্রবন্ধ। ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে রয়েছে একটি প্রবন্ধ। আছে বাংলাদেশের বহুপাক্ষিক বৈদেশিক নীতি নিয়ে ক্ষুদ্র আলোচনা।

পুস্তকটি শুরু করেছি উন্নয়ন দর্শনের তীব্র ক্রিটিক দিয়ে। পুস্তকটি সমাপ্ত করেছি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়ে। এর মাঝে আলোচনা করে বাংলাদেশের গণ মাধ্যমের চরিত্র নিয়ে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক। বহুল আলোচিত ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ’ পুস্তকের রচিয়তা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় বই ‘বাংলাদেশ অর্থনীতির ৫০ বছর’।  

১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালেবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। 

২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০