রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হলো সবে। এবারের মেলা নানা দিক দিয়েই তাৎপর্যপূর্ণ। কিছু বিতর্কের মাধ্যমে সূচনা হলেও ভালোভাবে শেষ হয়েছে মেলার যাবতীয় কার্যক্রম। সম্ভাব্য বিতর্কিত বইয়ের বিষয়ে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তের ভার তুলে দিয়েছিল পুলিশের হাতে। বইপ্রেমী ও লেখকরা এতে শঙ্কিত হন। ওই বিষয় ছাড়া একাডেমি সুষ্ঠুভাবে মেলার আয়োজন সম্পন্ন করেছে। অন্যান্য বারের তুলনায় মেলার পরিসর বড় ছিল, ক্রেতা-দর্শনার্থীরা স্বচ্ছন্দে বই দেখতে ও ঘুরতে পেরেছেন। ধুলাবালির উৎপাতও ছিল কম। বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। পাঠক-প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় ভালো মানের বই এসেছে বেশি। পাঠকও সেসব আগ্রহসহকারে কিনেছেন। অনেক স্টলে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের চেয়ে অপ্রতিষ্ঠিত বা নবীন লেখকদের বই বিক্রি হয়েছে বেশি। সব মিলিয়ে এবারের মেলার প্রভাব ইতিবাচক।
একই সময়ে ছোট আকারে হলেও বইমেলা হয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে। বাংলা একাডেমির বইমেলার ওপর গণমাধ্যমের আলো এত বেশি যে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বইমেলার খবর তেমনভাবে আসেনি। রাজধানীর বাইরের বাসিন্দারাও বইমেলার আয়োজন দেখতে চান নিজ নিজ শহরে। বই জ্ঞানের প্রতীক, মননের প্রতীক। বইয়ের মাধ্যমে আলোকোজ্জ্বল পথের দিশা পেতে চান যারা, তারা বইমেলার জন্য অপেক্ষা করেন। আমাদের সবকিছুই যেহেতু কেন্দ্রীভূত বইমেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে রাজধানীর বইমেলা প্রচার পায় যতটুকু, অন্য শহরে আয়োজিত মেলা তেমনটি পায় না। অথচ ব্যবসায়ী বা প্রকাশকরা নিজ উদ্যোগেই দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়, তাই এ মাসটি বাদ দিয়ে অন্য সময়ে দেশের বিভাগীয় শহরে বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর এ সাত শহরে সাত মাসে সাতটি বইমেলার আয়োজন করা যায়। অন্যান্য বড় শহর, যেমন: যশোর, কুমিল্লা, বগুড়া, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নোয়াখালী প্রভৃতিতেও মাঝেমধ্যে বইমেলার আয়োজন করা যায়। ঢাকার মতো বিভিন্ন শহরে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে মেলার আয়োজন করা হলে পাঠকরা খুশিই হবেন। এতে বিক্রিও কম হবে বলে মনে হয় না। পাঠক কিন্তু বইমেলায়ই বই কেনেন না। বইমেলার মূল উদ্দেশ্যও বই বিক্রি নয়; বরং পাঠকের সঙ্গে বইয়ের সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়া। প্রকাশকরা যদি কাজটি যথাযথভাবে করতে পারেন, তাহলে পাঠক সারা বছরই বই কিনবেন। তাৎক্ষণিক বিক্রির বিষয়টি তো থাকছেই। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্যরা উদ্যোগ নিয়ে কাজটি করতে পারেন। প্রয়োজনে স্থানীয় জেলা প্রশাসন বা বিভিন্ন একাডেমিরও সহায়তা নিতে পারেন তারা। বইমেলার আলো শুধু রাজধানীবাসীর জন্য নয়, এটি ছড়িয়ে যাক দেশজুড়ে। সারা দেশে বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন হবে এ প্রত্যাশা রাখছি আমরা।
Add Comment