সাধারণভাবে বলা যায়, জড় হতে জীবকে পার্থক্য করে যে জিনিস তা হলো প্রাণ। প্রাণ এমন এক জিনিস, যা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু বোঝা যায়। যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ একটি জিনিসকে জীবিত বলা যায়। অন্য দিকে আত্মা হলো কোনো জীবের অংশ, যা কোনো শরীর নয়। জীব যখন জীবিত থাকে, তখন এর ভেতরে একটি আত্মা থাকে এবং আত্মার সঙ্গে মস্তিষ্কের কাজ চলে। আর মৃত্যুর সময় আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে তখন আর মস্তিষ্ক কাজ করে না। তাই এ দু’টি বিষয় এক হতে পারে না। আক্ষরিক অর্থে, কোনো কিছুর খাঁটি ও সেরা অংশকে বলা হয় আত্মা-প্রাণ। মানবের প্রাণ-আত্মার নাম তখনই যথার্থ যখন তা মানুষের উচ্চ ও উৎকৃষ্টতম অঙ্গ। আত্মা হলো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ও উৎকৃষ্টতর সৃষ্টি।
প্রাণ ও আত্মার তৃপ্তি পাওয়া যায় তখনই যখন প্রাণীর হƒদয়ে নিঃস্বার্থতা কাজ করে। আর এ নিঃস্বার্থতা তখনই কাজ করবে যখন যে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করবে। সাহিত্যিক লিও টলস্তয়ের সরল স্বীকারোক্তি: ‘জীবনে তিনটি মাত্র জিনিসের প্রয়োজন বই, বই এবং বই।’ বই হলো আত্মার আত্মীয়, হƒদয়ের অতি আপনজন। একটি সুপাঠ্য বই একজন খাঁটি বন্ধুর চেয়েও ঢের আন্তরিক, উদার। যে শুধু বিনিময়বিহীন দিয়ে যায়। সুসময় কিংবা দুঃসময়, সর্বদা পাশে রয়। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তো স্পষ্ট ভাষায় বলেই ফেলেছেন, ‘বইয়ের মতো বিশ্বস্ত আর কোনো বন্ধু নেই।’ ওমর খৈয়ামের দৃষ্টিতে সেই বন্ধুটি অনন্ত যৌবনা, চির সবুজ। যার আদি আছে অন্ত নাই। দেকার্তের মতে, ‘ভালো বই পড়া মানে পূর্ববর্তী শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।’ একটা ভালো বইয়ের আছে সঞ্জীবনী শক্তি। আছে প্রশান্তির নিয়ামক। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘যে বই পড়াকে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।’ আত্মা নামক একটা বস্তুও হয় সদা অনুভূত। তারও চাহিদা আছে, ক্ষুধা আছেÑ যা নিবারণ করতে পারে শুধুই বই। গ্রিসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করে লেখা রয়েছে যে কথাটি, তা হলো ‘আত্মার ওষুধ’। তারা বইকে আত্মার রোগ নিরাময়কারী হিসেবে তুলনা করেছে। তাই জ্ঞানের বিশালতাকে জায়গা দিতে পারলেই আত্মার বিশুদ্ধতা স্ফুটন ঘটবে। নতুবা প্রাণ ও আত্মা দুই বিপরীত অবস্থানে চলে যাবে।
আরফাতুর রহমান শাওন
শিক্ষক, মিল্লাত উচ্চবিদ্যালয়
বংশাল, ঢাকা