বই ব্যবসা বৈচিত্র্যময় করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সম্পাদকের মতো লুকাসও বই ব্যবসা থেকে আশানুরূপ মুনাফা করতে চান। যদিও বই প্রকাশনা খাতটির বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘ। এর দায় প্রকাশকদেরও কম নয়। তাদের ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার কারণে ব্যর্থ হচ্ছে বই ব্যবসা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বিশাল পাঠকশ্রেণি গড়ে তুলতে পারেননি প্রকাশকরা। এই দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

প্রকাশনী সংস্থা নিউ ডিরেকশনসের কর্ণধার, সমালোচক ও বুক রিভিউ রিপোর্টার বারবারা ইপলার এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশনা খাত সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, এ খাতের এন্ট্রি লেভেলের বেতন খুবই কম। বেতন শুধু ‘হাতখরচ’ ছাড়া কিছুই নয়। প্রকাশনা সংস্থা ফারার, স্ট্রস অ্যান্ড জিরোক্সে এন্ট্রি লেভেলে বছরে মাত্র ২৫ হাজার ডলার বেতন দেয়া হয়। অথচ এ চাকরির ন্যূনতম যোগ্যতা কলেজ ডিগ্রি, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার মানসিকতা। তবে ২০১৮ সালে বেতন কিছুটা বেড়ে এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের বেতন বছরে ৩৮ হাজার ডলার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা জগতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, দেশটির বই প্রকাশনা বিশেষ করে সাহিত্য প্রকাশনাশিল্প গড়ে তুলেছেন ও পরিচালনা করছেন ধনী শ্বেতাঙ্গরা। ফারার, স্ট্রস অ্যান্ড জিরোক্সের প্রতিষ্ঠাতা রজার স্ট্রজ জুনিয়র, যার মা ছিলেন গুগেনহেইমের (প্রকাশনা সংস্থা) উত্তরাধিকারী এবং তার বাবা ছিলেন ফ্যাশন হাউস ম্যাসিসের উত্তরাধিকারী। গ্রুভ প্রেসের স্বত্বাধিকারী বার্নি রোসেট, যার বাবা শিকাগোর একটি ব্যাংকের মালিক। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মডার্ন লাইব্রেরি (বর্তমানে র‌্যান্ডম হাউস) কেনেন তামাক বিক্রেতা বেনেট চার্ফসন। তিনি ও তার অংশীদার ডোনাল্ড থাম্পারিচ বর্তমানে এ প্রকাশনী থেকে বছরে প্রায় ১৭ লাখ ডলার মুনাফা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কালো লেখকদের লেখা প্রকাশের জন্য সাদা প্রকাশকের কাছে দ্বারস্থ হওয়ার নিয়ম চালু ছিল। লেখিকা ট্রেসি শেরড পাবলিশার্স উইকলির এক প্রবন্ধে (পাবলিশড ইন ব্ল্যাক ইন হাই কটন) উল্লেখ করেন, কবি ল্যাংস্টোন হিউ ও সাহিত্যিক নেলা লারসেন ১৯২০ সালে শ্বেতাঙ্গ প্রকাশক ব্লাঞ্চে নফের সহায়তায় তার প্রতিষ্ঠিত খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা আলফ্রেড আ. নফ-এ বই প্রকাশে চুক্তিবদ্ধ হন। এ ঘটনা দিয়ে ট্রেসি কালো লেখকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। যদিও শ্বেতাঙ্গ প্রকাশকরা এ ধরনের বিষয় অস্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গত, ট্রেসি শেরড প্রকাশনা সংস্থা লিটন, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী সম্পাদক, তিনি কৃষ্ণাঙ্গনির্ভর অ্যামিস্টাড প্রেসের সম্পাদনা পরিচালক ছিলেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর হেনরি লুইস গেটস জুনিয়র বলেন, আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্যের বেলায় এক ধরনের কথা চালু রয়েছেÑকোন বিষয়গুলো শ্বেতাঙ্গ প্রকাশকরা ছাপাতে পারবেন না। একই কথা বলেন জেমস ওয়েলডন জনসন ও জোরা নিয়েল হার্টসটন। গেটস আরও বলেন, প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে কৃষ্ণাঙ্গ লেখকরা তাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সচেতন ছিলেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা শিল্পের জাতিগত বিদ্বেষ সম্পর্কে অবগত। এর পরও কৃষ্ণাঙ্গ লেখকদের বইয়ের কাটতি কম ছিল না। যেমন ১৯৪০ সালে প্রকাশিত রিচার্ড রাইটের বিখ্যাত উপন্যাস ইন্ডিজেনাস সন মাত্র তিন সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল দুই লাখ ১৫ হাজার কপি। ১৯৪৫ সালে তার আত্মজীবনী ব্ল্যাক বয়ের অসংখ্য কপি বিক্রি হয় এবং হচ্ছে।

১৯৬০ সালে নাগরিক অধিকার আন্দোলন জোরদার হলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রকাশকরা প্রকাশনা জগতে বৈচিত্র্য আনার কাজ শুরু করেন। পাঠ্যবইয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ডাবলডে অ্যান্ড কোম্পানি। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, চার্লস এফ হ্যারিসের কথা। তাকে কৃষ্ণাঙ্গদের বাণিজ্যিক ও পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে অগ্রদূত মনে করা হয়। এরপর অনেক প্রকাশক কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষা বিভাগে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন। এই সম্পাদকরা পরে অন্যান্য বিভাগে কাজ শুরু করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০