বই মেলায় অরুণ কুমার বিশ্বাসের আট বই

নিজস্ব প্রতিবেদক: অরুণ কুমার বিশ্বাস মূলত কিশোর অ্যাডভেঞ্চার ও গোয়েন্দা লেখক। এবারে একুশে বইমেলায় তার আটটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। যার বেশির ভাগ গোয়েন্দা ধাঁচের লেখা। এর মধ্যে রয়েছে ‘গুবলু গোয়েন্দা বিপদে’ ও ‘চিলিংহ্যাম দুর্গে আতঙ্ক’। দুইটি বই পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে বেরিয়েছে।

এছাড়া ‘তদন্তে ভুল ছিল’ কলি প্রকাশনী, ‘ফেরিবোটে ফেরেববাজ’ বাংলাপ্রকাশ, ‘অনল মিত্রের অপমৃত্যু’ অন্য প্রকাশ, ‘জোহানেসবার্গে জিঘাংসা’ অনিন্দ্যপ্রকাশ, ‘সিধুমামার সিন্দুক রহস্য’ বাবুই প্রকাশন এবং ‘লাশকাটা ঘর’ কথাপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে।

‘অনল মিত্রের অপমৃত্যু’ উপন্যাসের আখ্যান ভাগের গল্পটি মোটামুটি নিন্মরুপ- বছর সাতেক আগে আচমকা মারা যান দেশের নামি আয়কর উপদেষ্টা অনল মিত্র। তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, বিষক্রিয়ায় ভিকটিমের মৃত্যু হয়েছে বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের বরাতে উল্লেখ করে ফরেনসিক বিভাগ। পুলিশের খাতায় আত্মহত্যা কিংবা অপমৃত্যু।

পরে অবশ্য অনলবাবুর স্ত্রী সাগর দত্ত বলে একজনকে আসামি করে খুনের মামলা দায়ের করেন। মামলা চলমান, কিন্তু এই কেসের কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। অনল মিত্রের মেয়ে পৃথা দীর্ঘদিন পর যোগাযোগ করে প্রাইভেট ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়ের সঙ্গে, যার ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা বলে আদতে কিছু নেই।

তিনি চৌকস, পেশাদার ও অসম্ভব মেধাবী- এককথায় অন্তর্যামী। সহকারী উর্বী ও ক্রাইমরিপোর্টার শুভকে নিয়ে তিনি নেমে পড়েন অনল মিত্রের মৃত্যুরহস্য খুঁজতে। একে একে উঠে আসে বেশ কিছু নাম ও রহস্যজনক ঘটনা। হঠাৎ ব্যাংকের একটা চিঠি ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দশ লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন অনলবাবু! কেন? এ ব্যাপারে পরিবারের কেউ কিচ্ছু জানে না। নিহতের স্ত্রী রীতিমতো অন্ধকারে! অনল মিত্রের ঘরে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটতে গিয়ে বেরিয়ে আসে একটি ছবি। সেই ছবি থেকেই জট খুলতে শুরু করে অনল মিত্রের অপমৃত্যু রহস্যের।

এখানে উল্লেখযোগ্য চরিত্র অবশ্যই অনল মিত্র, তবে প্রাইভেট ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় তার দুই সহযোগী উর্বী বোস এবং ক্রাইম রিপোর্টার শুভ’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্যক্তি অনল মিত্র রূপক হতে পারে, আবার তার ব্যক্তিগত দুঃখবোধ একজন অনল মিত্রকে ছাপিয়ে সাধারণ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল- বলা নেই কওয়া নেই, কেন তিনি সুইসাইড করলেন। স্রেফ জীবনযন্ত্রণা, পেশাগত নাকি জটিলতা নাকি তারচেও বড় কোনো কারণ লুকিয়ে রয়েছে তার আত্মহননের পেছনে! ডিটেকটিভ অলোকেশ মৃতের মেয়ে পৃথুলার কথায় আস্থা রেখে পুরো অ্যাখ্যানে খুঁজে ফেরেন সেই অজানা প্রশ্নের উত্তর।

এ উপন্যাসের ডিকশন বা শব্দরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লেখক অত্যন্ত যত্ন নিয়ে সুনিপুণভাবে চরিত্রসমূহ বিনির্মাণ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, স্রেফ গল্প বা ঘটনার আটপৌরে বয়ানে সেই অর্থে কৃতিত্ব কিছু নেই। তাতে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ বা মন ভেজানো- কোনোটিই ঠিক হয়ে ওঠে না। তাছাড়া গোয়েন্দা গল্পের নিজস্ব একটি মেজাজ বা উপস্থাপনশৈলী রয়েছে, যা কিনা অন্যবিধ সাহিত্যশাখার (প্রেমের গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা বা ভ্রমণসাহিত্য) সঙ্গে ঠিক মেলে না।

এ বিষয়ে মার্কিন লেখক জেপলিন জ্যাকস যেমনটি বলেছেন, গোয়েন্দা গল্পের শব্দচয়ন হতে হবে শার্প বা ধারালো, শিল্পরীতিতে থাকবে একশ মিটার দৌড়বিদের মতো প্রচন্ড গতি, আর ডিকশন হবে র্টাস বা চাঁছাছোলা। বয়ানে অহেতুক বাড়তি আবেগ বা গল্পের ভেতরে মেদ-মজ্জা যত কম হয় ততই ভালো।

লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস সেই অর্থে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, এবং তার উপন্যাস পড়তে গিয়ে কখনওই মনে হয় না যে, তিনি অকারণ শব্দযোগ কিংবা ভাষার অপপ্রয়োগ করেছেন। বরং আঙ্কিক বয়ানে তিনি পুরো গল্পটি এক নাগাড়ে বলে গেছেন। ফলে পাঠক একবার পড়তে শুরু করলে তার পক্ষে মাঝপথে উঠে আসবার আর কোনো পথই তিনি খোলা রাখেন নি।

###

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০