নিজস্ব প্রতিবেদক:রোগী নিয়ে যারা হাসপাতালে আসেন, তারা অসহায়ই থাকেন। নিরুপায় হয়েই সেবা নিতে আসেন। কিন্তু তাদের আরও কষ্টে ফেলে দেন হাসপাতালেরই কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী-কর্মকর্তা। বকশিশ ছাড়া তারা সেবায়ই দিতে চান না। অসুস্থ রোগীদের ট্রলিতে ওঠাতেও বকশিশ দিতে হয় তাদের। এমনই চিত্র পাওয়া গেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে। বিভিন্ন সময়ে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গতকাল সোমবার দুপুরে হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে সত্যতা পেয়েছে দুদক।
রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন ও সাবদারুল ইসলামসহ সাতজন এ অভিযান পরিচালনা করেন। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আউটডোর, বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুুদক সূত্র জানিয়েছে, সংকটাপন্ন রোগীদের ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিতে বকশিশ প্রদান, জরুরি
বিভাগে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে পদে পদে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তিনি হাসপাতালের সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
রমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছর হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক এবিএম রাশেদুল আমীরও বকশিশ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়েছিলেন। তার কাছে বকশিশ দাবি করেছিলেন কয়েকজন কর্মচারী। সেই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনার পর হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক দুই কর্মচারী মাসুদ হোসেন ও ঝর্ণা বেগমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর কিছুদিন পর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও দুই সহকারী পরিচালকসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১২ অফিস সহায়ক, এক স্টোনো টাইপিস্ট, এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এক নিরাপত্তা প্রহরী এবং এক ওয়ার্ড মাস্টারকে বদলি করা হয়। এরপর কয়েক মাস রোগী ও স্বজনরা বকশিশ সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে রেহাই পেলেও আবার চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পরিচালকের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করেন। এরপর পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বদলি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।