ব্যবসায়ীদের দাবিতে সিদ্ধান্ত বদল বাংলাদেশ ব্যাংকের

বকেয়া ঋণের ১৫% দিলেই খেলাপির তালিকায় নাম নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড মহামারির সর্বোচ্চ শনাক্তের সময়ে বকেয়া হওয়া ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। গতকাল নতুন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ী ও ব্যাংক উদ্যোক্তাদের দাবিতে পূর্বের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বড় ঋণগ্রহীতাদের বকেয়া ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি হিসেবে গণ্য হবে না। শুধু ক্ষুদ্র ঋণের বেলায় এটি ছিল সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। এখন থেকে ক্ষুদ্রসহ সব ঋণের বেলায় বকেয়া ঋণের ১৫ শতাংশ দিলেই ঋণটি খেলাপি হবে না। ফলে ছোট ও বড় আকারের উদ্যোক্তাদের সমান সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকটি দাবি নিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে তিনটি দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে। আর সব ধরনের ব্যবসায়ীদের দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব ধরনের ঋণের বকেয়ার ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই তা খেলাপি হবে না।’

জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। সেখানে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রণোদনার মেয়াদ ও সুবিধা না বাড়ানোর জন। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শুধু ক্ষুদ্র গ্রাহকদের বকেয়া ঋণের ১৫ শতাংশ ও বাকিদের ২৫ শতাংশ দিলেই খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হবে না। কিন্তু এ ঘোষণার পর গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন নতুন দাবি নিয়ে যান ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। সঙ্গে ছিলেন ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি’র কয়েকজন প্রতিনিধিও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ব্যবসায়ী নেতাদের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণসীমা বাড়ানো, স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধে সময় বৃদ্ধি ও লোকাল এলসির ক্ষেত্রেও একই দাবি জানান। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈশ্বিক কভিড মহামরির বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অর্থনীতি ও জীবন রক্ষায় ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সেসব সুবিধার মেয়াদ শুধু ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিল। পরবর্তীতে তা একাধিকবার বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জন্য তা নির্দিষ্ট করা হয়। এরপর আর মেয়াদ বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখন শুধু বকেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কভিডের কারণে চলতি বছর একজন ঋণগ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কেউ ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবেন না।

গতকালের বৈঠকে ব্যবসায়ীরা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে কভিডের প্রকোপ আবার বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ একাধিক দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকটি দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো হলেও রপ্তানির প্রধান কেন্দ্রে আবার নানা বিধিনিষেধ আসছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব তৈরি হবে। আর এটা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের কিস্তি জমা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০