বকেয়া টাকা না পেয়ে ক্যান্টিন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রাবির শফিকুল

প্রতিনিধি, রাবি: ১২ বছর ধরে ক্যান্টিন চালাচ্ছি। কত শিক্ষার্থীকে নিজ হাতে ফ্রিতে খাওয়া-দাওয়া করিয়েছি। গত পাঁচ বছরে কত শিক্ষার্থী বাকি খেয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু গত এক বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো বাকি খেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বাকির টাকা আজ পাব, কাল পাব বলে প্রতিনিয়ত দিন গুনছি। কিন্তু বাকির টাকা না পেয়ে ক্যান্টিন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমার। তাই একরকম নিরুপায় হয়েই ক্যান্টিনের প্রবেশ মুখে লিখে দিয়েছি ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না; আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়; আমাকে ক্যান্টিন চালাতে সহযোগিতা করুন।’ মনের ভেতর এক বুক কষ্ট নিয়ে অসহায় হয়ে এমন করেই কথাগুলো বলেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ক্যান্টিনের মালিক শফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীরা ‘শফি ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। শফিকুলের ক্যান্টিনে বাকি খেয়ে আজ অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন অনেকই। শফিকুলের আচরণ ভালো হওয়ায় বন্ধুর মতো মিশেন শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিনে গিয়ে নিজের হাতে নিয়ে খেয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। খাওয়া শেষ হলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই হিসাব করে বিল দেন। শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজন কর্মচারী নিয়ে চালাচ্ছেন এ ক্যান্টিন। গত এক বছরে তার ক্যান্টিনে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো বাকি পড়েছে। এ বকেয়া পরিশোধের জন্য ক্যান্টিনের প্রবেশ মুখে নোটিশ টানিয়েছেন শফিকুল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাদের কাছে বকেয়া রয়েছে তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বকেয়া তুলনামূলক কম।

বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, যাদের কাছে বকেয়া পাই তাদের অনেকবার বলেছি বকেয়া পরিশোধ করার জন্য। কিন্তু তারা সেভাবে সাড়া দিচ্ছে না। এখন মানুষের কাছ থেকে ধার করে ক্যান্টিন চালাতে হচ্ছে আমাকে। ইতোমধ্যে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছি। এখন এ টাকাগুলো শোধ করতে পারলে শান্তি পেতাম। তাই যাদের কাছে আমার বকেয়া আছে তারা পরিশোধ করলে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্যান্টিন চালিয়ে যেতে পারতাম। অন্যাথায় পথে বসতে হবে আমাকে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জিনিসপত্রের প্রচুর দাম। তবু ক্যান্টিনে কোনো খাবারের দাম বাড়ায়নি। আমি সবাইকে নিয়েই বাঁচতে চাই। এমন যেন না হয় শিক্ষার্থীরা আমাকে শেষ করে দিয়ে বাঁচবে।

বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অভিযোগ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছেলেরাই বাকি খেয়েছে বেশি। রাজনীতি করে না এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। প্রতি মাসের বাকি টাকা পরের মাসে দিয়ে দিলে আমার এত কষ্ট হতো না। মাসের পর মাস অতিক্রম হলেও বকেয়া পরিশোধ করে না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কামরুল হাসান অভি বলেন, শফি ভাই অসম্ভব ভালো একটা মানুষ। ভাইয়া ছাড়া কখনও ডাক দেয় না আমাদের। আমিও মাঝে মধ্যে বাকি খাই, কিন্তু সময়ে সময়ে তা পরিশোধ করে দিচ্ছি। এখানে যারা দলীয় পরিচয়ে বা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বাকি খেয়ে বকেয়া পরিশোধ করছে না তারা ঠিক করছেন না বলে জানান তিনি। তাদের উচিত শফি ভাইয়ের এমন বিপদে তার বকেয়া পরিশোধ করে তার পাশে দাঁড়ানো।

শফিকুল ইসলাম কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে ১৯৭১ সালে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহীতে আসেন। বর্তমানে নগরের বিনোদপুর এলাকার মির্জাপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ছোটবেলা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় হয়েছেন। ক্যান্টিন চালিয়েই তার সংসার চলে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০