বকেয়া না দিয়েই প্রতিষ্ঠান বিক্রি শুল্ককর দেয়নি ৯ কোটি টাকা

রহমত রহমান: শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার বেশি কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে। সেই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির প্রমাণ নেই। পণ্য রপ্তানির প্রমাণও নেই। পরিশোধ করা হয়নি প্রায় ৯ কোটি টাকার শুল্ককর। প্রতিষ্ঠান করা হয়নি নিরীক্ষা। কাঁচামালের হিসাব দেয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি শুল্ককর। কিন্তু মালিক বিক্রি করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান। ইন্ট্রাকো সোয়েটার্স লিমিটেড নামে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে প্রায় কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। তবে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়নি।

এনবিআর সূত্রমতে, সাভারের ইন্ট্রাকো সোয়েটার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে বন্ড লাইসেন্স নিয়েছে। কিন্তু ২০১১ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকার নিরীক্ষা করেনি। এছাড়া এ সময় যে কাঁচামাল আমদানি করেছি, তার বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করেছে কি না-তার কোনো প্রমাণ নেই।

বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা সিআইএস সেল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। যাতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল পর্যন্ত বন্ড সুবিধায় চার লাখ ৬১ হাজার ৪৪৩ কেজি কাঁচামাল আমদানি করেছে। রপ্তানির সপক্ষে প্রতিষ্ঠানটি কোনো ইউডি বা রপ্তানিসংক্রান্ত দলিলাদি দাখিল করেনি। রপ্তানি আদৌ করেছে কি নাÑতারও কোনো প্রমাণ নেই। এতে স্পষ্ট যে, প্রতিষ্ঠানটি পণ্য উৎপাদন না করেই কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এই কাঁচামালের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৯ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ৯ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৭ টাকা। এই শুল্ককর পরিশোধ ও লিখিত জবাব দিতে প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া হয়নি। ২২ সেপ্টেম্বর, ২৫ অক্টোবর ও সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি প্রতিষ্ঠান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুনানিতে কেউ অংশ নেয়নি।

সূত্র আরও জানায়, বন্ড কমিশনারেটে থাকা কাগজপত্র ও সিআইএস সেলের তথ্যাদি কমিশনার পর্যালোচনা করেন। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানকে ৯১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ৬ জানুয়ারি কমিশনার রায় দেন। ১৫ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধের আদেশ দেয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।

বন্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা না করে এবং শুল্ককর পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে এই প্রতিষ্ঠানের আগের মালিকদের অন্য কোন কোন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

অপরদিকে, কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন ইন্ট্রাকো সোয়াটার্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। বন্ড কমিশনারেট মামলা করেছে। যাতে বলা হয়েছে, প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করেছেন, যাতে শুল্ককর প্রায় ৯ কোটি টাকা। আপনারা কোনো পণ্য রপ্তানি করেননি। এমনকি কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন-এমন প্রশ্নে আতাউর রহমান বলেন, কাঁচামাল বাইরে বিক্রির প্রশ্নই আসে না। আমাদের কোনো স্টক লট ছিল না। এ গার্মেন্টসের অধীনে ব্যাংক লোন দিয়েছে। কাঁচামাল বিক্রি করলে, পণ্য রপ্তানি না করলে ব্যাংক লোন দিত?

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে মজিবুর নামে এক ব্যক্তির কাছে ওই ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দিয়েছি। এটা তো ফ্যাক্টরি বিক্রির আগের ঘটনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সব দেনাসহ বিক্রি করে দিয়েছি।’ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন আতাউর রহমান। তবে ইন্ট্রাকো সোয়েটার্স লিমিটেডের বর্তমান মালিকের কোনো নম্বর নেই বলে তিনি জানান। অনেক চেষ্টা করেও বর্তমান মালিক মজিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০