নিজস্ব প্রতিবেদক: অবিলম্বে ৬ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন রেডিও টুডে এফএম ৮৯.৬-এর কর্মীরা।
রোববার (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ভুক্তভোগী কর্মীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে গঠিত ক্ষতিপূরণ আদায় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোসকায়েত মাশরেকের সঞ্চালনায় সকাল ১১টায় কর্মসূচি শুরু হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রেডিও টুডের কর্মীরা তাদের দুঃখ কষ্ট ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। এসময় তারা বলেন, দেশের প্রথম বেসরকারি এফএম রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে এফএম ৮৯ দশমিক ৬ এ বিগত কয়েক বছর ধরে বেতন ভাতা, পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভীষণভাবে অনিয়মিত। বর্তমানে বেশিরভাগ কর্মীর ৫-৬ মাসের বেতন ভাতা বকেয়া পড়েছে। ফলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
তারা আরও বলেন, বেতন ভাতা ও অন্যান্য ন্যায্য পাওনার জন্য শত অনুনয় বিনয় ও আবেদন নিবেদন করলেও মালিকপক্ষ তাতে কর্ণপাত তো করছেই না বরং নানান টালবাহানা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। একই সঙ্গে কর্মীদের চাকরি থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাঁটাই, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার চাপসহ নানা ধরনের নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অফিস সহকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা একবার অসুস্থ হয়। তখন আমার দুই মাসের বেতন বাকি ছিল। সেই বেতনটিও আমাকে তখন দেওয়া হয়নি। ১৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। কতো মানুষকে দেখেছি বেতন না দিয়েই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সংবাদ পাঠিকা তাজকিয়া বিনতে নাজিব বলেন, গত ৫ বছর ধরে বেতন-ভাতা-ইনক্রিমেন্ট অনিয়মিত রয়েছে। গত ৫ মাস ধরে পুরোপুরি বেতন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারপরও স্টেশনটি বন্ধ হয় নি। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মী যার যার ক্ষেত্র থেকে কাজ চালিয়ে গেছেন। প্রডিউসার প্রডিউসারের কাজ করেছে, প্রেজেন্টার প্রেজেন্টারের কাজ করেছে, সাংবাদিক সাংবাদিকের কাজ করে গেছে। আমরা কেউ আমাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি। তাহলে কেন আমাদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে। স্টেশন মালিককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি সাইট দেখার জন্য লোক দিবেন তাহলে তো হবে না। আপানার নিজের চোখে দেখতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কি। আপনারে যারা ইনফরমেশন দিচ্ছে তারা ভুল ইনফরমেশন দিচ্ছে। কতিপয় কিছু দালালের জন্য আজ আমরা সবাই ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইদের তার সন্তানের জন্য দুধ কেনার টাকাও নেই। অনেকের ঘরে দিনের পর দিন চুলো জ্বলে না। আমরা কাজ করতে চাই। আমরা কাজ করে খেতে চাই।
এসময় অনেকে অভিযোগ করেন, ব্যবসার সুবাদে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা বিদেশে প্রাচার করেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক এই রফিকুল হক। বিষয়টি দুদকের তদন্ত করে দেখা উচিৎ বলেও দাবি জানিয়েছেন কেও কেও। দেশে তার বাবা (সাবেক বি.এন.পির এম. পি) মোজাম্মেল হকের গড়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনো রয়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক স্টাফ রিপোর্টার নিয়াজ মাকদুম নামের এক সংবাদকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বকেয়া বেতন পাওনা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি ২০১৫ সালের অগাষ্ট মাস থেকেই প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে কর্মীদের বেতন বোনাস প্রদায়ে অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “সেখানে দেখলাম শিল্পপতি বাবা মোজাম্মেল হকের তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো ভাইয়েরা মিলে লুটেপুটে শেষ করে দিচ্ছে। এখন ছালবাকল অবশিষ্ট আছে। এরমধ্যে সোনার ডিম দিতো রেডিও টুডে। জায়গার অভাবে বিজ্ঞাপন চালাতে পারতোনা। ফিরিয়ে দিতে হতো।

রফিকুল হক সাহেব এবং তার ভাইদের বলবো, আপনাদের একসপ্তাহ কুত্তা পালনের সমান টাকা দেন একজন কর্মীকে। সেই টাকা নিয়ে নয়ছয় করার মধ্যে আপনরা কি সুখ পান???” এসময় প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অভিযোগ করেন তিনি।
মানববন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, সাংবাদিকদের যে ন্যায্য পাওনা তা পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে অধিকাংশ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিব্রত হতে হয় পরিবার বা পাড়া-মহল্লায়।
তিনি আরও বলেন, আসুন একটি সংগ্রাম গড়ে তুলি। তাদের অফিস বা বাড়ি ঘেরাও করি। দাবি নয় এটি আমাদের অধিকার। আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এসময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান জিহাদ, সংগ্রাম কমিটির আহ্ববায়ক ও রেডিও টুডের স্পেশাল করস্পন্ডেন্ট মোশকায়েত মাশয়েক, সদস্য সচিব আশরাফ হোসেন, নিউজ ইনচার্জ সাহেদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।