পারভীন লুনা, বগুড়া: শীত আসছে। দিনে গরম অনুভূত হলেও রাতে পড়ছে ঠাণ্ডা। ভোরে আর সাতসকালে ঘাস-পাতার ওপর জমে থাকা শিশিরকণা জানিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা। আর এই খবরে বগুড়ার জেলা-উপজেলায় লেপ-তোশক প্রস্তুতকারী ধুনকারদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। একইসঙ্গে গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে পড়ে গেছে কাঁথা সেলাইয়ের ধুম।
সাধারণ কার্তিক, পৌষ ও মাঘ এই তিন মাস শীত পড়ে। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ-তোশক বানানোর দোকানে এখন ক্রেতাদের লম্বা লাইন। তাদের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে লেপ-তোশকের দোকানগুলো।
বগুড়ার লেপ-তোশকের কারিগর মামুন শেখ বলেন, ‘ক্রেতারা শীতের কথা মাথায় রেখে আগাম লেপ-তোশক বানাতে দিচ্ছেন। অর্ডার পেয়ে কারিগররাও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।’ তিনি জানান, একটি লেপ তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে গড়ে পাঁচ-সাতটি লেপ তৈরি করতে পারেন। দিনে তিন থেকে চারটি তোশক তৈরিতেও একই সময় ব্যয় হয়। বর্তমান বাজারে একটি লেপ কিংবা তোশক তৈরিতে খরচ পড়ে এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
জানা গেছে, লেপ-তোশকের মূল্য নির্ধারণ হয় তুলা ও কাপড়ের মানের ওপর। বাজারে কয়েক ধরনের তুলা আছে, দামও ভিন্ন। তবে চলতি বছর তুলা ও কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেশি হচ্ছে। শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, কার্পাস তুলা ২৫০ টাকা, গার্মেন্ট তুলা ২০ টাকা ও সাদা তুলা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ক্রয় করছেন কারিগররা। এছাড়া কাপড়ের গজ মান অনুযায়ী প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ভালো মানের একটি লেপ বানাতে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। একই মানের তোশকেও খরচ আসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আর কারিগররা আকার অনুযায়ী মজুরি পান ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
এদিকে তুলা ব্যবসায়ী আমিরুল জানান, শীত মৌসুমের পুরো তিন মাস কারিগররা লেপ-তোশকসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করলেও বছরের অন্য সময় সেভাবে বিক্রি হয় না। বছরের প্রায় আট মাস তাদের অনেকটা অলস সময় কাটাতে হয়। কেউ কেউ অলস সময়ে ছাতা মেরামতসহ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হন। কয়েক দিন ধরে শীতের আগমনী বার্তায় প্রতিদিনই লেপ-তোশক তৈরির অর্ডার বেড়ে গেছে। এজন্য এখন কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানিয়েছেন, একেকজন কারিগর দিনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করেন। তবে তুলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লেপ-তোশক তৈরিতে খরচ বেড়েছে। তাছাড়া বর্তমানে বিক্রি বেড়েছে। করোনার কারণে সবাই সতর্কতা অবলম্বন করায় ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি পেতে এসব উপকরণ তৈরিও বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, শীতের তীব্রতা যত বাড়বে বেচাকেনাও তত জমবে। এদিকে বগুড়ার রেলবাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারেও জমে উঠেছে লেপ-তোশকের ব্যবসা। পুরোদমে শীত শুরু হতে বেশি দেরি নেই। ফলে বাড়তি চাহিদা মেটাতে লেপ-তোশক তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি প্রস্তুত।