Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:50 pm

বগুড়ায় কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে সবজির দাম

প্রতিনিধি, বগুড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে সিন্ডিকেট। কৃষক জমিতে পাচ্ছেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। হাটে ধাপে ধাপে কমিশন খাওয়া দালাল চক্রও নেই। ফলাফলে কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা করে কমেছে সব সবজির দাম। এদিকে ছাত্ররা বিভিন্ন খুচরা বাজারে তদারকি শুরু করায় সেখানেও এর সুফল মিলেছে। ভোক্তার কাছে আগের চেয়ে কম দামে যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। সোমবার বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতের কৃষক, সবজি হাট ও পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে মিলেছে এ তথ্য। উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সবজিহাট মহাস্থান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কৃষক সরাসরি নির্ধারিত দরে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। আগে হাটে ঢোকামাত্রই সিন্ডিকেট দালালচক্র কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য করত। সোমবার হাটে সেই চিত্র ছিল না। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তা কিনতে পারায় প্রতিটি সবজি ১০-২০ টাকা প্রতি কেজিতে কমে কিনতে পেরেছে।

এরই মধ্যে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে এ অঞ্চল থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ বেড়ে গেছে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে যেসব সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, তা আবারও কমতে শুরু করেছে। এখন পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট নেই। পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে।
তারা বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমে আসতে শুরু করেছে।

বগুড়ার মহাস্থানহাটে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। সোমবার পটোল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সাড়ে ১৭ টাকা, যা দুদিন আগেও ছিল ৪০ টাকা। ঢ্যাঁড়শের কেজিও ৬০ থেকে নেমে এসেছে ৪০ টাকায়। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজিতে, যা ছিল ৪০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দামও কমতে শুরু করেছে। এ পণ্য ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ছিল ২০০ টাকার ওপরে। সাচি লাউ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। আগেও এর দাম ছিল ৫০ টাকার বেশি। প্রতি কেজি বেগুনের আগে দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে। ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া ঝিঙা এখন ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কমেছে আলুর দামও। প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। এছাড়া পেঁপে ১০ টাকা কমে কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকায়, কাঁকরোল ৪০, বরবটি ৬০, কচুর লতি ৪৫-৫০, কাটকচু ১০ টাকা প্রতিটি, লেবু প্রতি শত ৬০ টাকায় ও পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সদর উপজেলার শাখারিয়া নুরুইল মধ্যপাড়ার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি ১০ শতাংশ জমিতে দুধকুশির আবাদ করেছেন। দুদিন পরপর ৬০ কেজি করে ফলন তোলেন। এগুলো জমিতেই ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তারপরও তার লাভ থাকছে। কারণ কোনো অতিরিক্ত টাকা তাকে দিতে হচ্ছে না। পাশেই দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুর রহিমও বলেন একই কথা। তিনি ২০ শতাংশ জমিতে মুলার আবাদ করে এখন ২০ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি করছেন। অথচ আগে হাটে নিলে অর্ধেক দামে বিক্রি করা লাগত।

শহরের রাজাবাজারের সবজি বিক্রেতা মিল্টন মিয়া বলেন, এখন পণ্য ঠিকমতো আসছে। এর আগে মাল কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন আমরা খুচরায় ১০-২০ টাকা কেজিপ্রতি কম দামে সবজি বিক্রি করছি। আরেক সবজি বিক্রেতা একরাম বলেন, ছাত্ররা যখন তখন বাজারে ঢুকে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও থাকেন, যে কারণে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। এতে করে আমরাও খুশি।
ফতেহ আলী বাজারে মুরগি বিক্রেতা জাহিদুল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০ টাকা, যা এ সপ্তাহে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। সোনালি বা পাকিস্তানি ৩২০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৬০-২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকা থেকে কমে বর্তমানে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শেরপুরের চাল ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী বলেন, গত দুদিনে বাড়েনি চালের দাম। এখানে মিলরেটে মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, কাটারি ৬৫-৭০, আটাশ চাল ৫০ ও মোটা চাল ৪৪-৪৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ কম হলেও মাছের দাম বাড়েনি। রুই-কাতলার দর কেজিপ্রতি ৩২০-৬০০ টাকায়, চিংড়ি ৫৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬৫০ ও পাঙাশ-তেলাপিয়া-জাতীয় মাছগুলো ২০০-৩৫০ টাকায় পাওয়া গেছে।
বেশ কয়েকজন সবজি বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম কমার বড় কারণ হলো আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো। দোকান বসলে টাকা দিতে হতো, পিকআপে করে সবজি আনার সময় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ হতো, বর্তমানে সেই খরচটি নেই। সে কারণে আগের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে কম দামে বিক্রি করতে পারছি।
বগুড়া ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন-সংশ্লিষ্ট বিবিধ ব্যয় কমেছে। এর ফলে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বাজার মনিটরিং কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান।