Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:58 am

বগুড়ায় মোখলেসুর রহমানের হরিণ খামার

পারভীন লুনা, বগুড়া: বগুড়ার শিবগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত চাতাল ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান (৬৮)। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের সিহালী গ্রামে এ ব্যবসায়ীর ঠিকানা। দীর্ঘ চার যুগ ধরে অটো রাইস মিলের ব্যবসা করছেন। এরই মধ্যে ২০০৩ সালে রাজশাহী চিড়িয়াখানা থেকে শখের বসে ৩৩ হাজার টাকা দিয়ে চিত্রা প্রজাতির একজোড়া হরিণ কেনেন তিনি। ওই সময় হরিণ লালনপালনে সরকার কোনো ধরনের লাইসেন্স না দিলেও চিড়িয়াখানা থেকে অনুমতিপত্র দেয়া হয়। পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি গড়ে তোলেন হরিণের খামার। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১২টি হরিণ। 

কথা হয় মোখলেসুর রহমানের ছেলে মতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, চাতাল ব্যবসার পাশাপাশি ১৭ বছর আগে শখের বসে তার বাবা হরিণের খামার গড়ে তোলেন। প্রথম যখন আনা হলো সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকত, ওদের ভাষায় কথা বলত। যখন বুঝতে পারে এখানে ওরা বন্দি তখন আস্তে আস্তে সুপরিসর ঘর আর বাগানকেই বন মনে করে এখন মানিয়ে নিয়েছে। খাবার দেয়ার সময় হলে ওরা ছুটে আসে।

তিনি জানান, বনের নিরীহ এই প্রাণীগুলোর নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ। নিজে থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। এজন্যই ওদের রোগবালাই কম। যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে না। এমনকি পরিষ্কার না হলে খাবারও খায় না। বন বিভাগের অনুমতিতে গত ১৫ বছরে ২০টি হরিণ বিক্রি করেছেন তার বাবা। যারা কেনেন তাদেরও লাইসেন্স থাকতে হয়। প্রথম দিকে প্রতি জোড়া হরিণ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি জোড়া এক লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।

মতিয়ার রহমান জানান, হরিণের মাংস কেনাবেচায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হরিণের খামার করার সুযোগ নেই। তবে শখের বসে কেউ খামার করতে চাইলে বণ্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স ফি ১০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা ও প্রতিটি হরিণ বাবদ ১০০ টাকা করে ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এই নবায়ন ফি আরও কমানোর জন্য দাবি জানান তিনি।

এদিকে হরিণ দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, জšে§র পর বাচ্চার গায়ে হাত দিলে হরিণ সহজে দুধ দেয় না। হরিণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। খামার পরিষ্কার রাখা হয় সবসময়। নারী ও পুরুষ হরিণের মধ্যে খুব ভাব। ভাবের আগে ডাকাডাকি আর লাফালাফিই ওদের প্রেমের আমন্ত্রণ। এ খামারের সব হরিণ চিত্রা।

সিহালী এলাকার আবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন হরিণ দেখতে আসে। হরিণ পালনে সরকারি লাইসেন্স করতে হয়, খরচও অনেক। সে কারণে ইচ্ছা থাকলেও সহজে কেউ হরিণ পালন করতে পারে না।

খামারের মালিক মোখলেছুর রহমান জানান, হরিণকে কচি পাতা, কাঁঠাল পাতা, নরম ঘাস, অঙ্কুরিত চারা শৈবাল ও নরম ফল খেতে দিতে হয়। আঁশযুক্ত খাবার এরা খায় না। এদের পাকস্থলী ছোট। রেইন হরিণ ছাড়া সব পুরুষ হরিণের শিং আছে। হরিণ নিজে থেকেই পরিষ্কার থাকে, ওদের রোগবালাই কম। তিনি আরও জানান, হরিণ প্রতিপালনে নিয়ম আরও সহজ করা দরকার। ফি, লাইসেন্স ও নবায়ন ফি কমালে দেশে অনেক হরিণের খামার গড়ে উঠবে। যুবকরাও হরিণ পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি আরও বৃহৎ পরিসরে হরিণের খামার গড়বেন বলে জানান। 

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, চিত্রা হরিণের খামারে সহযোগিতা করা হয়। যারা হরিণ পালন করছেন তাদের এই ভালোবাসায় খাদ আছে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তারা হরিণ পালন করে বেশি দামে বিক্রি করে দেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে যে কেউ বৈধভাবে হরিণের খামার গড়ে তুলতে পারেন।