Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:24 am

বগুড়া থেকে বিলুপ্তির পথে বাবুই

পারভীন লুনা, বগুড়া: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা থেকে বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে। এ কারণে কালেভদ্রে বাবুই পাখির দেখা মিলছে।

তালগাছ, খেজুরগাছ ও নারিকেলগাছেও আর দেখা যায় না বাবুই পাখির বাসা। উপজেলার সব গ্রামে বাড়ির সামনে-পেছনে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে ও মাঠে-ময়দানে অসংখ্য তাল, খেজুর ও নারিকেলগাছ ছিল। এসব গাছে একসময় বাবুইয়ের বাসা দেখা যেত। ওইসব গাছের পাতামোড়ানো নিপুণ কারুকার্যখচিত বাসা দেখতে খুব সুন্দর লাগত।

সন্ধ্যায় যখন বাবুই বাসায় ফিরত তখন কোলাহল শোনা যেত। বর্তমানে কিছু তাল, খেজুর ও নারিকেলগাছ থাকলেও বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যায় না।

নন্দি গ্রামের শামছুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে তাল, খেজুর ও নারিকেলগাছে বাবুই বাস করত। এখন আর বাবুই পাখির দেখাই মেলে না।

বাবুই প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে বলা চলে। ব্যাপকহারে তাল ও খেজুরগাছ কাটার কারণে ও শিকার করায় এখন বাবুই দেখতে পাই না। অথচ সব ধরনের প্রাণী সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন।

বাবুইয়ের বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। কথিত রয়েছে, রাতে বাসায় আলো জ্বালানোর জন্য বাবুই জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় গুঁজে রাখে। সকাল হলে জোনাকিদের আবার ছেড়ে দেয়।

বাবুইযের বাসা দেখতে অনেকটা উল্টানো কলসির মতো। বাসা বানানোর জন্য এ  পাখি খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সরায়। যতœ করে পেট দিয়ে ঘষে (পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে। সাধারণত তালপাতা, ঝাউ, খড় ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে বেশ আকর্ষণীয় ও মজবুত এবং প্রবল ঝড়েও তা ঝরে পড়ে না।

বাসা তৈরির শুরুতে বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকলেও পরে একদিক বন্ধ করে বাবুই তাতে ডিম রাখার জায়গা তৈরি করে। অপর দিকটি লম্বা করে তৈরি করে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ। বাবুই বাসা তৈরি করার পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সাধারণত খুঁটে খুঁটে নানা ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে এ পাখি।

নন্দিগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রহমান বাবুইয়ের বাসার ছবি তুলতে এসে বলেন, ‘বাবুই পাখির বাসা শৈল্পিক নিদর্শন, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক ও স্বাবলম্বী হওয়ার উৎসাহ। আমাদের এলাকার তালগাছে বাবুই বাসা বাঁধায় এ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও কালের বিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আমরা হারাতে বসেছি।’

স্থানীয় সুমন শিকদার বলেন, ‘বাবুই পাখি অত্যন্ত নিপুণ কারিগর ও সৌন্দর্যসচেতন। আগে গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল, খেজুর ও সুপারি গাছে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। দেশের বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় বাবুই পাখি ও এর বাসা এখন বিলুপ্তির

পথে। আগে গ্রামগঞ্জে তালগাছ দেখলেই তাতে

শোভা পেত বাবুই পাখির বাসা। এখন সেই তালগাছও প্রায় বিপন্ন।’

নন্দীগ্রাম সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখি আছে। প্রজাতিগুলো হলোÑদেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। এই তিন প্রজাতির মধ্যে দেশি বাবুই পাখি আমাদের গ্রামাঞ্চলের তালগাছ, নারকেলগাছ, খেজুরগাছ ও রেইনট্রিগাছে দলবেঁধে বাসা বাঁধলেও বাংলা ও দাগি প্রজাতির বাবুই পাখি বিরল। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশি বাবুই পাখিও এখন বিলুপ্তির পথে।’