মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: লাগামহীন বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য খাতের কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরির বঙ্গজের শেয়ারদর। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই এ শেয়ারদর গড়ে বাড়ছে এক শতাংশের ওপরে। এক মাসে এর দর বেড়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। অস্বাভাবিক এমন দর বৃদ্ধিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। দর বৃদ্ধির সঠিক কারণ বলতে পারছে না খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, এক মাস আগে এই শেয়ারের দর ছিল ২৪৪ টাকা ৪০ পয়সা। সেখান থেকে কোনো কারণ ছাড়াই টানা বাড়তে থাকে শেয়ারদর। দর বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে ডিএসই কর্তৃপক্ষের। তারা কোম্পানিটিকে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস জারি করে। জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের কাছে শেয়ারদর বৃদ্ধি পেতে পারেÑএমন কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে ডিএসইতে এমন তথ্য দিলেও কর্তৃপক্ষের দাবি সম্প্রতি মুনাফায় ফেরার কারণে এ শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে গত দুবছর ছাড়া প্রতিবারই আমরা লভ্যাংশ দিয়ে আসছি। লোকসানের কারণে দুবার লভ্যাংশ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ফিরেছে। সে কারণেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ছে।
আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দুবছর লোকসানে থাকলেও বর্তমানে মুনাফায় ফিরেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৯ মাসে (জুলাই ১৭-মার্চ ১৮) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪২ পয়সা। গত বছর একই সময় শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪৭ পয়সা। অন্যদিকে একই সময় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি দাম বেড়েছে ২২ টাকা ৫৫ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২২ টাকা ১৩ পয়সা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কোম্পানিটি যে পরিমাণ মুনাফায় ফিরেছে, সে তুলনায় দর বেড়েছে অনেক বেশি। তারা এ শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেন। তারা বলেন, কারসাজি ছাড়া এর শেয়ারদর এভাবে বাড়ার কথা নয়। তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি নিয়ে কারসাজির ঘটনা বেশি ঘটছে। যে কারণে এসব কোম্পানিকে সতর্ক করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির বিষয়ে কঠিন অবস্থানে রয়েছে ডিএসই। তাই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সজাগ হওয়া দরকার। তা না হলে এসব শেয়ার নিয়ে এক সময় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
গতকালের লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, সর্বশেষ এ শেয়ার লেনদেন হয় ৩৩৩ টাকা ৭০ পয়সায়। দর ওঠানামা করে ৩২৮ টাকা থেকে ৩৪৬ টাকার মধ্যে। ৫৩৯ হাওলার মধ্য দিয়ে মোট শেয়ার লেনদেন হয় ৩৬ হাজার ৩৪৭টি। গত এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সর্বনি¤œ ১১৩ টাকা ২০ পয়সায় এবং সর্বোচ্চ ৩৪৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৩ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। পরের বছর প্রদান করে ৫০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদান করে। এরপর থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫৭ দশমিক ৯০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে। এছাড়া পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি সাত দশমিক ২৫ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে।