Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:15 am

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই আবিষ্কৃত হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা আছে এক দিন ঠিকই আবিষ্কৃত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে গতকাল রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তবে আমার অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে আমাদের যারা তারা কী করে জড়িত থাকল? হত্যার বিচার করেছি। তবে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা, সেটা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সেটা এক দিন না এক দিন আবিষ্কৃত হবে, এটা ঠিক।’ সূত্র: বিডি নিউজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটাই কাজ, প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার করা। আর সব থেকে বড় কাজ হলো দেশটাকে নিয়ে, মানুষগুলোকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের মানুষের উন্নয়ন করা, সেই উন্নয়ন করাকে আমি সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কী করেছে, সেদিকে আমি না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ধাপে ধাপে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্র বা এ দেশেরও কিছু পাকিস্তানি দালালচক্র বা তাদের খোশামোদকারী, তোষামোদকারী, পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী বাঙালির এই অভ্যুদয় বা বিজয়কে কখনও মেনে নিতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মোশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আবার অনেকেরই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। আর এই ঘটনা ঘটাতে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু উচ্চপর্যায়ে যদি তাদের পক্ষে কেউ না থাকে, এটা কখনও সম্ভব ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আর উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে কে ছিল, সেটা তো ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কর্নেল ফারুক ও রশীদ বিবিসিতে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল, সেই সাক্ষাৎকারেই তারা বলেছিল যে, জিয়াউর রহমান যে উপসামরিক প্রধান ছিল, তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, সম্পর্ক ছিল এবং সফল হতে পারলে সে তাদের পাশে থাকবে, এ কথাও দিয়েছিল এবং সব রকম সহযোগিতাও করেছিল। কাজেই মোশতাক-জিয়ার যে-ই সখ্য এবং তাদের যে এ কাজের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততা আছে, এটা তো স্পষ্ট।’

জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো পাকিস্তানের অনেক চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই বলেছিলেন, বাংলাদেশ তাদের কাছে একটা বোঝা ছিল। কারণ এই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেশি, ক্ষুধার্ত। বাংলাদেশ সব ধরনে অনগ্রসর। কাজেই এটা নাকি পাকিস্তানের জন্য বোঝা। পাকিস্তানিরা ভুলে গিয়েছিল যে, তাদের যতটুকু উন্নয়ন তার অর্থ জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ একমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো, বাংলাদেশ থেকেই সবকিছু যেত এবং সেটা নিয়ে তারা নিজেদের উন্নত করে। কিন্তু বাংলাদেশকে তারা সেই দরিদ্র রেখে যায়, ক্ষুধার্ত রেখে যায়। বাংলাদেশকে বঞ্চিত রেখে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেকে এই ধরনের মতামত দিয়েছিল যে, এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা ছিল, চলে গেছে ভালোই হয়েছে। এরা তো আর কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। পাকিস্তানি সেই সমস্ত লোক তাদের যে মতামত আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের চিন্তা-ভাবনা ও কার্যক্রম যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন একই, তাদের মধ্যে মিলে যায়। তারাও ভেবেছিল, এই বাংলাদেশ কোনোদিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর প্রান্তে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কৃষি ও সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ সংগঠনের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।