Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:50 am

বঙ্গবন্ধু টানেলে উপশহরে রূপ পাচ্ছে আনোয়ারা

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): উপমহাদেশের প্রথম টানেল নির্মিত হচ্ছে অর্থনীতির শহর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। যার সংযোগ পথের এক প্রান্থ হচ্ছে শিল্প জোন হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ আনোয়ারা উপজেলা। বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে পাল্টে যাচ্ছে আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপথের চিত্র। বিশেষ করে পরিবর্তনের ছোঁয়াই বদলে যাবে আনোয়ারার অর্থনীতির দৃশ্যপট। ইতিমধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থসামাজিক অবস্থান। সাধারণ মানুষ টানেল নিয়ে দেখছে নতুন দিনের স্বপ্ন। টানেল নির্মাণে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অর্থনীতিবিদ, আনোয়ারার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিগন।

এদিকে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কেইপিজেড, চায়না  ইকোনমিক জোন, পারকি সৈকত, আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ ও বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা নতুন করে রূপ পাচ্ছে উপশহরে। তাছাড়া কর্ণফুলী টানেল কে ঘিরে কর্ণফুলী ক্রসিং থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত পিএবি সড়কের  চার লেনের রুপান্তরের  কাজে এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ইতিমধ্যেই কর্ণফুলী টানেলের আশপাশের এলাকায়  দেখা দিয়েছে পরিবর্তনের হাওয়া। স্থানীয়রাও দেখছে নতুন দিনের স্বপ্ন। টানেল কাজ সম্পূর্ণ হলে নতুন করে সৃষ্টি হবে আর্থসামাজিক অবস্থান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম প্রকল্প কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ এখন দৃশ্যমান। টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর দুইপাড় সংযুক্ত হচ্ছে। এ পাড়ের আনোয়ারা পয়েন্টের টানেলের টিউবের মুখ বের হয়েছে পারকি সিইউএফএল এলাকায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার হলেও টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব হবে মাত্র আট কিলোমিটার। টানেল ব্যবহার করে সহজে পর্যটকরা ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন পারকি সমুদ্রসৈকতে।

চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যানবাহন উঠবে কক্সবাজার মহাসড়কে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত  প্রায় ১১ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক। ফলে আনোয়ারার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। টানেল ঘিরে শিল্পকারখানা ও আবাসনের পাশাপাশি খুলবে পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে মুখর হবে পারকি। হবে কর্মসংস্থান, বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। ফলে পর্যটন খাত থেকে সরকারের আয় বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটাই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

টানেল নির্মাণে আনোয়ারার আর্থসামাজিক অবস্থান কেমন হবে জানতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সিবিএ নেতারা বলেন, আনোয়ারায় ভৌগলিকভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। টানেল নির্মাণ হলে বিদেশী ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে  আরো আগ্রহী হবে। যার উন্নয়নের প্রভাব শুধু আনোয়ারা নয় পুরো দক্ষিণ জনপদ বিস্তার হবে। এছাড়াও সামনে আরো যা মাষ্টার প্লান আছে  তা বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারা হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাজার। এদিকে কেইপিজেড, কাফকো ও সিইউএফএল কে কেন্দ্র করে বন্দর সেন্টার এলাকায় গড়ে ওঠেছে অসংখ্য অভিজাত রেস্টুরেন্ট আধুনিক হোটেল-মোটেল। স্থানীয়রা মনে করেন বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, চায়না ইকোনেমিক জোন বাস্তবায়ন ও চলমান পিএবি সড়কের চার লাইনের কাজ সম্পর্ণ হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে।

টানেল নির্মাণ ও আনোয়ারার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার বরাবরাই উন্নয়ন বান্ধব সরকার। আর আনোয়ারার অভিভাবক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী একজন ক্রিয়েটিভ নেতৃত্ব। যার নেতৃত্বের ছোঁয়া আনোয়ারাকে বদলে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আনোয়ারাকে নিয়ে একটি মাষ্টার প্ল্যান গ্রহণ করেন। এটি বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারাকে যাতে বিশ্ব বাজারের স্পট বানানো যায় তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী মহোদয় বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যান। যার ফল স্বরুপ আনোয়ারায়, সিইউএফএল কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কেইপিজেড, চায়না  ইকোনমিক জোন সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ বা¯তবায়ন ও আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স । এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারা শুধু উপশহর নয় একটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত হবে।