নিজস্ব প্রতিবেদক : মো. মোজাহেরুল ইসলাম, ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ঢাকা দক্ষিণ জোনের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। যদিও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে তার পূর্ব ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তবে সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাম ভাঙিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনে তদবির, খেলাপি গ্রাহকদের অনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য তদবিরসহ নানা ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
এর বাইরে ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়ানো, নারী কর্মীদের তার ইচ্ছেমতো বিভিন্ন বিভাগে পদায়নে তদবির, ঋণ মওকুফ করানোর নামে গ্রাহকদের কাছে কমিশন চাওয়া ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ব্যাংকের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ, অফিসে দেরিতে আসা প্রভৃতি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন মো. মোজহারুল ইসলাম। এছাড়া তার নামে আর্থিক অয়িনমের একাধিক অভিযোগ ব্যাংক লিখিতভাবে জানান ভুক্তভোগীরা।
ইসলামী ব্যাংক সূত্র জানায়, মো. মোজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনেও মোজাহেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলে উঠে আসে।
সূত্রমতে, গত ২৩ মে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতির কাছে মো. মোজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ইসলামী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা। এতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের স্বঘোষিত সভাপতি এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন নাই বা সাধারণ সভা আহŸান করেন নাই। একাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান তিনি, এজন্য সংগঠনটিকে শক্তিশালী করতে দেন নাই। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি পদকে পুঁজি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক বা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে সংগঠনের ও ইসলামী ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তিনি বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য ইত্যাদির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ ও হুমকি প্রদান করেন। বর্তমান সভাপতি বিভিন্ন সময়ে প্রধান কার্যালয়ের নিকট বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন ও খেলাপি গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন। এছাড়া নারী কর্মীদের তার পছন্দমতো বদলি বা পদায়নের জন্য জোরাজুরি করেন। তিনি একজন নারী নির্যাতনকারী, যা তার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংকে মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়।
এর আগে মো. মোজাহেরুল ইসলাম জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেন একাধিক প্রমাণাদিও চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে তার নিয়োগের সময় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ দুইজন নেতার সুপারিশও জমা দেন ইসলামী ব্যাংকে, যার অনুলিপিও রয়েছে। এছাড়া চাকরিতে যোগদানের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি জামায়াতে ইসলামীর জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বায়তুল মাল (মাসিক চাঁদা) আদায় করতেন।
এ অবস্থায় ইসলামী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদকে ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন তথা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বর্তমান কমিটির পক্ষ থেকে। চিঠিতে একাধিক সহসভাপতিসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা স্বাক্ষর করেন। চিঠির অনুলিপি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও দেয়া হয়েছে।
এর আগেও একই ধরনের অভিযোগ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানান মোজাহেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে, যাতে বলা হয়, মোজাহেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য।
জানতে চাইলে মো. মোজাহেরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেয়ার কথা না। কে অভিযোগ দিয়েছে জানতে চেয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন। এছাড়া শেয়ার বিজ কীভাবে অভিযোগগুলো পেল সেটাও জানতে চান তিনি।
প্রসঙ্গত, ঠাকুরগাঁওয়ের লাহিড়ী হাট পৌরসভার পাঁচদোয়াল গ্রামের বাসিন্দা মো. মোজাহেরুল ইসলাম ইসলামী ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জনের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্যাংকে আসা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন, যা তারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লিখিতভাবে জানান। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তার অফিসে উপস্থিতির ডিজিটাল হাজিরা চেক করে দেখা গেছে, তিনি একজন পিয়নের সহায়তায় কারসাজি করে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে প্রায় সময়ই অফিসে আসতেন না।