মো. ইমরান হোসেন ও মো. রেজোয়ান হোসেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জে অবস্থিত। ২০১১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রথম পর্যায়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে চারটি অনুষদে পাঁচটি বিভাগ খোলা হয়। প্রতি বিভাগে ৩২ জন করে মোট ১৬০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে দুই হাজার ২০৭ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। আসনসংখ্যার দিক দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এখন বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রায় ৫৫ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আধুনিক ল্যাবরেটরি। দেওয়া হয়েছে দ্রæত গতির ইন্টারনেট (ব্রডব্যান্ড ও ওয়াই-ফাই) সংযোগ। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষ করতে গড়ে তোলা হয়েছে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ল্যাব।
উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের উদ্যোগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এজন্য গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি সেল। এ বছর নেপালের ৩০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
নেপালি শিক্ষার্থী সুমি সিং ভর্তি হয়েছেন কৃষি বিভাগে। তিনি জানান, যেদিন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারি, সেদিন থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটির সঙ্গে পরিচিত হই। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। মূলত সেই থেকেই গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উচ্চশিক্ষা নিতে আসার গল্পের শুরু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের অতিথি। আমরা সেভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করি। বিভিন্ন উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সেলামি ও উন্নত খাবার সরবরাহ করা হয়। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মাণাধীন হল চালু হলে তাদের আরও ভালো ও উন্নত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সহজেই অনুমেয়, সুনাম ও নিষ্ঠার সঙ্গে চলছে বশেমুরবিপ্রবি। যতদিন যাচ্ছে, শিক্ষার মান বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপাচার্য মহোদয়ের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১-কে টার্গেট করে ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩২টি বিভাগ খোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আরও দুটি গবেষণা ইনস্টিটিউট খোলা হবে। ইনস্টিটিউট দুটি বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
পাদটীকা
বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম ১৯৯৯ সালে হলেও বিভিন্ন কারণে তার কার্যক্রম থেমে ছিল। তবে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আবার ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বরে স্থগিত প্রকল্পটি পুনর্জীবিত করা হয় এবং ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি প্রফেসর ড. এম খায়রুল আলম খানকে প্রকল্প পরিচালক করে ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আইন-২০০১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসআরও জারি করে।