ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে গাজীপুরে সাফারি পার্ক অবস্থিত। ভাওয়াল গড়ের ছোট টিলা ও নিচু ভূমিসমৃদ্ধ শালবনে তৈরি করা হয়েছে সাফারি পার্কটি। দেশের পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম স্থান এটি। গাজীপুর সাফারি পার্ক নামেও পরিচিত। পার্কটি চার হাজার একর জমি নিয়ে অবস্থিত। ঢাকার কাছে হওয়ায় পরিবার নিয়ে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরতে পারবেন। পার্কটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত।
কোর সাফারি
কোর সাফারি পার্কের ২০ একরে বাঘ, ২১ একরে সিংহ, আট একরে কালো ভাল্লুক, আট একরে সিংহ, আট একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১ একরে চিত্রাহরিণ, ৮০ একরে সাম্বার ও গয়াল, ১০৫ একরে হাতি এবং ৩০ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ রয়েছে। আফ্রিকান সাফারি পার্কের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪০ একর। এর মধ্যে বাঘ, সিংহ, সাদা সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ড বিস্ট, অরিক্স, ব্ল্যাক বাক, ভাল্লুকসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী রয়েছে। এখানে গাড়ি ছাড়া কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারে না। দর্শনার্থীদের জন্য দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস রয়েছে। পর্যটক বা দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট ফি বাবদ গাড়ি বা জিপে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে রাখা বন্যপ্রাণী দেখতে পারবেন। গাড়ির ভেতর থেকে বাঘ, সিংহ কিংবা জিরাফকে ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন।
সাফারি কিংডম
৫৫৬ একর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাফারি কিংডম। এখানে রয়েছে নীল-সোনালি ম্যাকাও, সবুজ ম্যাকাও, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া, পেলিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ ৩৪ প্রজাতির পাখি। পাখিগুলো আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে। আছে মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম। ২০ প্রজাতির মাছ, ক্রোকোডাইল ফিশ, টাইগার ফিস, ব্ল্যাক গোস ও অস্কার রয়েছে। রয়েছে চিকলেট মাছ, যা ২০ সেকেন্ড পরপর রং পরিবর্তন করে। এছাড়া রয়েছে প্রজাপতি সাফারি। এখানে ২৬ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, জিরাফ ফিডিং স্পট, আইল্যান্ড, বোটিং ও লেক জোন, অর্কিড হাউজ, শকুন ও প্যাঁচা কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, ক্যাঙারু, হাতি শো গ্যালারি প্রভৃতি।
সাফারি কিংডমের পশ্চিমে আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল তিনটি পাখিশালা (অ্যাভিয়ারি)। এখানে রয়েছে আট প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, ফিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিংগো, ব্ল্যাক সোয়ান ও বিরল প্রজাতির মান্ডারিন ডাক রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার
পার্কের প্রবেশপথে পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজে ৩৮ একর এলাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় মুরাল ও মডেলসহ প্রধান ফটক, ফোয়ারা, জলাধার ও হ্রদ।
তথ্যকেন্দ্র, পার্ক অফিস, ডরমিটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ময়ূরী বিশ্রামাগার,
ইকো-রিসোর্ট ও ছাতা রয়েছে। আরও রয়েছে দুটি বিশাল আকারের পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ একটির নাম টাইগার রেস্তোরাঁ, অপরটি সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই রেস্টুরেন্টে বসে কাচের মধ্য দিয়ে সিংহ ও বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়া-দাওয়া করা যায়। বিরল প্রজাতির কিছু বন্য প্রাণী আছে, যা এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় না। আল পাকা, ক্ষুদ্রকায় ঘোড়া, ওয়ালাবি, ক্রাউন ক্রেইন, মান্ডারিং ডাক প্রভৃতি রয়েছে।
শালবন, বন্য প্রাণীবিষয়ক অধ্যয়ন ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য পার্কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভোজ্য ফল, পশুখাদ্য ও মিশ্র প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের বাগান রয়েছে। আছে দেশি বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী বাঘ, সাম্বা হরিণ, মায়া হরিণ, শূকর, বনবিড়াল, বানর, শিয়াল, বেজি, খেঁকশিয়ালসহ অন্যান্য তৃণভোজী ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। এসব বন্য প্রাণী এখানে প্রজনন ও সংরক্ষণ করা হয়। পার্কটির ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের বিভিন্ন বৈচিত্র্য সংরক্ষিত রয়েছে। পার্কটি পরিদর্শনের মাধ্যমে পর্যটকরা কিছুটা হলেও আফ্রিকার বন্য জগৎ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
উল্লিখিত তিনটির পাশাপাশি বায়োডাইভার্সিটি পার্ক ও এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি রয়েছে।
নির্দেশনা
ময়লা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে
শব্দ করা যাবে না
কোনো প্রাণীকে খাবার দেওয়া ও বিরক্ত করা যাবে না
রেস্ট হাউজ ব্যবহার করার আগে অনুমতি নিতে হবে
সময়সূচি
মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কীভাবে যাবেন
গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার গেলেই চোখে পড়বে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড। বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কে যেতে রিকশা ও অটোরিকশায় যাওয়া যায়। ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী পরিবহনের বাসে চড়ে বাঘের বাজার যাওয়া যায়। ছুটির দিন ও সাধারণ দিন হিসেবে ভাড়া ওঠানামা করে।
শিপন আহমেদ