নিজস্ব প্রতিবেদক: যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোলহার বাড়ল ১০ বছর পর। গড়ে ১৭ শতাংশ টোল বৃদ্ধি করা হলেও যানবাহন ভেদে তা বাড়ছে ১০-২৫ শতাংশ। এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন টোলহার কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত মুক্তারপুর সেতুর টোলও বাড়ছে। শিগগিরই তা কার্যকর করা হবে।
গতকাল এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এর তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে পারাপারের জন্য বাইকের টোল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হচ্ছে। হালকা যান তথা কার ও জিপের টোল ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। আর মাইক্রোবাস ও পিকআপের (দেড় টনের কম) টোল ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট বাসের (৩১ আসন বা তার কম) টোল ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা এবং বড় বাসের (৩২ আসন বা তার বেশি) টোল ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সেতুটিতে ছোট ট্রাকে (দেড় থেকে ৫ টন) টোল ছিল ৮৫০ টাকা, যা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকে (৫ থেকে ৮ টন) টোল এক হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২৫০ টাকা আর বড় ট্রাকে (৮ থেকে ১১ টন) টোল এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে তিন এক্সেলের ট্রাক তথা কাভার্ডভ্যানের টোলহার দুই হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নতুন হার।
একইভাবে ট্রেইলারের টোলহারও নতুন নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল হবে তিন হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য তিন হাজার টাকা সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকা করে যোগ হবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন পারাপারের জন্য রেলওয়েকে আগে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা চার্জ দিতে হয়। নতুন হারে তা বেড়ে হলো এক কোটি টাকা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে নতুন টোলহার অবিলম্বে কার্যকর হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিএ’র নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক শেয়ার বিজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অটোমেটেড, তাই সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সর্বসাধারণকে বিষয়টি জানানো হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে মোট ৭৩ লাখ ৯ হাজার ৩৯৬টি যানবাহন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ১৩০টি। অর্থাৎ গত অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপার বেড়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার ২৬৬টি বা প্রায় ২২ শতাংশ।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সেতুটিতে এটি টোল আদায়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর আগের অর্থবছর সেতুটিতে টোল আদায় হয়েছিল ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বেড়েছে ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ।
তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশাপাশি মুক্তারপুর সেতুতেও একইদিনেই নতুন টোলহার কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে মুক্তারপুর সেতুতে ভ্যান (তিন চাকা বিশিষ্ট)/বাইকের টোল হার ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে সিএনজি অটোরিকশার টোল ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, কার, টেম্পু, জিপ, মাইক্রো ও পিকআপে টোল ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা এবং বড় ট্রাকে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর বাইরে মুক্তারপুর সেতুতেও তিন এক্সেলের ট্রাক ও ট্রেইলারের জন্য নতুন টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন এক্সেলের ট্রাকের টোল ৮০০ টাকা ও চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকার সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য ৫০০ টাকা করে যোগ হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের জুনে। এর ১৩ বছর পর সেতুটির টোলহার বাড়ানো হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তা কার্যকর করা হয়। আর ২০০৮ সালে উদ্বোধনের পর থেকে মুক্তারপুর সেতুর টোলহার বাড়ানো হয়নি।