প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: ঈদকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষদের ভোগান্তি কমাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের জন্য স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় দ্বিগুণ লেন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুই লেন করা হয়েছে। তারপরও গতকাল সকাল থেকেই সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মোটরসাইকেলের যাত্রী ও চালকদের।
টোল প্লাজা সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৭৩৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে বাইক ছিল পাঁচ হাজার ২২৭টি। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশই ছিল বাইক। স্বাভাবিক অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে তিন-চারটি লেন চালু রাখা হয় টোল আদায়ের জন্য। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে এই মহাড়কে প্রায় কয়েকগুণ যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়। তাই যানজটমুক্ত রাখতে সেতুতে বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহনের জন্য সাতটি লেনে টোল আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া মোটরসাইকেলের জন্য বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে আলাদা দুই লেন করা হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের কারণে পুরোপুরি লেন দুটি বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে যানজট এড়াতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটারের বিপরীতে প্রায় ২৯ কিলোমিটার ঘুরে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে ফের দুই লেনে প্রবেশ করতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর হয়ে ভূঞাপুর উপজেলা সদর দিয়ে মহাসড়কের এলেঙ্গায় ভ‚ঞাপুর লিংকরোডে মিলিত হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। ভ‚ঞাপুর লিংকরোড থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার দুই লেন সড়কে যাতে যানজট না হয়, সেজন্য অস্থায়ী এ ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। যানবাহনগুলো এলেঙ্গায় গিয়ে চার লেনের সুবিধায় ঢাকায় যেতে পারছে। আর এলেঙ্গা থেকে উত্তরবঙ্গগামী দুই লেন সড়ক ওয়ানওয়ে লেন করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে এমন ব্যবস্থা করেছে পুলিশ প্রশাসন।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুইলেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এজন্য এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ানওয়ে) করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এ সড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলছে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভ‚ঞাপুর হয়ে এলেঙ্গায় মিলিত হচ্ছে। এ কারণে যানজট হওয়ার আশঙ্কা কমেছে। গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
জানা যায়, মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুই লেন হওয়ায় যানজটের কারণে যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদযাত্রায় যানজটের শঙ্কায় ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ২৯ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক ঘুরে ভ‚ঞাপুর হয়ে এলেঙ্গায় প্রবেশ করছে। এই গাড়িগুলো এলেঙ্গায় গিয়ে চার লেনের সুবিধা পাচ্ছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু (পাথাইলকান্দি), সিরাজকান্দী, মাটিকাটা, গোবিন্দাসী স্কুল রোড, ভ‚ঞাপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবৈধভাবে সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক, পিকআপভ্যান, ইট ও বালি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এই সড়কটি সরু থাকায় যানচলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে চালকদের।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় ঘুরে দেখা যায়, ঢাকাগামী লেনে সেতুর মাঝখান থেকে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুর পূর্বপাড় গোলচত্বর হয়ে ভ‚ঞাপুর সরু সড়কে গাড়ি প্রবেশের কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে উত্তরবঙ্গগামী সড়কে যানজট লক্ষ করা যায়নি।
এদিকে যানজট নিরসনে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের ধেরুয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এসব সেক্টরে ৭১০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এর মধ্যে ১০০ জন এপিবিএন সদস্যও রয়েছেন। কোথাও যানজটের সৃষ্টি হলে দ্রæত তা নিরসনের জন্য কাজ করছেন তারা। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।