বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল বৃদ্ধির প্রস্তাব দ্বিতীয় দফা বাতিল

ইসমাইল আলী: যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের জুনে। এর প্রায় ১৩ বছর পর সেতুটির টোল হার বাড়ানো হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কার্যকর করা ওই হারেই এখনও সেতুটিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে দুই দফা টোল হার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিল সেতু কর্তৃপক্ষ, তবে একবারও কার্যকর করা যায়নি নতুন টোল হার।
সর্বশেষ সমাপ্ত বছরের (২০২০ সাল) ডিসেম্বরে টোল বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভা তা বাতিল করে দেয়। এর আগে ২০১৭ সালে আরেক দফা টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি না মেলায় তা কার্যকর হয়নি।
সূত্রমতে, সম্প্রতি টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাব সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় তোলা হয়। এতে যানবাহনভেদে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল ৩৮ থেকে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। পাশাপাশি মুক্তারপুর সেতুর টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাবও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যানবাহনভেদে টোল হার ২০ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল।
প্রস্তাবনায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুতে চলাচলের জন্য বাইকের টোল হার ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। হালকা যান তথা কার ও জিপের বিদ্যমান টোল হার ৫০০ টাকা, যা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মাইক্রোবাস ও জিপের (দেড় টনের কম) টোল হার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ছোট বাসের (৩১ আসন বা তার কম) টোল হার ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বড় বাসের (৩২ আসন বা তার বেশি) টোল হার ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে ছোট ট্রাকে (দেড় থেকে পাঁচ টন) বর্তমান টোল হার ৮৫০ টাকা, যা বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ থেকে আট টন) বর্তমান টোল হার এক হাজার ১০০ টাকা, যা বাড়িয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বড় ট্রাকে (আট টনের বেশি) বর্তমান টোল হার এক হাজার ৪০০ টাকা, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেইলার চলাচলে নতুন টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এক্ষেত্রে চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে চার হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য চার হাজার টাকার সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে যোগ করা হবে।
এদিকে মুক্তারপুর সেতুতে ভ্যান (তিন চাকাবিশিষ্ট)/বাইকের টোল হার ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশায় ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, অন্যান্য অটোরিকশায় ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা, কার/জিপে ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, মাইক্রোবাস/টেম্পো/পিক-আপে ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা এবং বড় ট্রাকে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর বাইরে মুক্তারপুর সেতুতেও ট্রেইলার চলাচলে নতুন টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এক্ষেত্রে চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকার সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য ৭৫০ টাকা করে যোগ করা হবে।
টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাব বলা হয়, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল হার ১৯৯৭ সালের পর সর্বশেষ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া কর্তৃপক্ষের আওতাধীন মুক্তারপুর সেতুর টোল হার ২০০৮ সালে নির্ধারণ করা হয়। পরে সেতু দুটির বিদ্যমান ও ট্রাফিক ফোরকাস্ট, সেতু কর্তৃপক্ষের আয় ও ব্যয়, সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, ডিএসএল (ঋণের কিস্তি) প্রভৃতি বিবেচনায় ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি টোল হার বৃদ্ধি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সেতু কর্তৃপক্ষের গঠিত কমিটি। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সেতু দুটির টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে তাতে সম্মতি পাওয়া যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন না পাওয়ায় তা কার্যকর করা হয়নি।
প্রস্তাবে আরও জানানো হয়, আগের প্রস্তাব পাসের পর অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে টোল হার বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে সেতু কর্তৃপক্ষের গঠিত কারিগরি কমিটি। এক্ষেত্রে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশের কাতারে বাংলাদেশের উন্নতি, জনগণের মাথাপিছু আয় ২০১১ সালের ৮৬২ ডলার থেকে ২০২০ সালে দুই হাজার ৬৪ ডলারে বৃদ্ধি, কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স, বঙ্গবন্ধু সেতুর বার্ষিক ঋণ পরিশোধের (ডিএসএল) পরিমাণ, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন বৃহৎ সেতুগুলোর টোল হার বিবেচনা করা হয়েছে।
এদিকে নতুন হার কার্যকরের পর তিন বছর অন্তর অন্তর সেতু দুটির (বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর) টোল হার যথাক্রমে ৫ ও ১০-এর গুণিতক হিসেবে বৃদ্ধির প্রস্তাবও করা হয়। বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর টোল হার বৃদ্ধির এ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠানো হতো। অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেত। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় তা অনুমোদন না হওয়ায় পুরো কার্যক্রম আটকে গেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০