অনাথ শিশুর মতো যার জীবনখানি নিস্তরঙ্গে নিথর হতে পারতো নিযুত জীবনের নিঠুর নিয়তিপাশে তিনি জুগিয়েছেন হৃৎস্পন্দনের খোরাক। দেশের জন্য লড়েছেন। শূন্য জমিনে গড়েছেন ব্যবসায় কাঠামো। জীবনের সব অর্জন লিখে দিয়েছেন মানুষের নামে। তিনিই দেশের সবচেয়ে সফল ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর জনক রণদা প্রসাদ সাহা। নারীশিক্ষা ও চিকিৎসায় নারী-পুরুষ কিংবা ধনী-গরিবের ভেদ ভেঙেছেন। তার জীবনেই রয়েছে সসীমকে ডিঙিয়ে অসীমে শক্তি সঞ্চারের কথামালা। এ জীবন ও কেতন যেন রোমাঞ্চিত হৃদয়েরই উদ্দীপ্ত প্রেরণা। পর্ব-২২
মিজানুর রহমান শেলী: সময়টা ছিল উত্তাল। বঙ্গভঙ্গ এবং তার পরবর্তী স্বদেশি আন্দোলন নিয়ে তখন বাংলা তথা ভারত ছিল উত্তপ্ত। এর সঙ্গে গত ৪০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাস, সাম্রাজ্যবাদ, খেলাফত, বলকান ইস্যু ইত্যাকার বিষয়-আশয় নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছিল টালমাটাল। একটি প্রতিদ্বদ্বিতা ও শক্তি প্রদর্শনের চরিত্র তখন কিছু কিছু রাষ্ট্রের মধ্যে পেয়ে বসে। ফলে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল। এ সময় রণদা এক ছোট বালক। তবে যেকোনো মানব-মানবী সময়ের ভেতর দিয়েই বেড়ে ওঠেন। সেই সময় হয় রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রাসঙ্গিক। তৈরি হয় সময়ের কাঠামো। সে কাঠামোর ভেতর দিয়েই রণদার মতো মানুষরা বেড়ে ওঠেন। পাঠ্য থেকে যত না শেখে, সময়-কাঠামো থেকে তার চেয়ে বেশি।
১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকার বাংলা দুই ভাগ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তখন কলকাতার হিন্দু অভিজাতরা প্রতিবাদ জানান। এমনকি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করতে ডজন ডজন পিটিশন করতে থাকেন তারা। তবুও ব্রিটিশ সরকার হিন্দু অভিজাত শ্রেণির এসব আবেদনে কর্ণপাত করলেন না। এরপর আসে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস। তখন লর্ড কার্জন সিমলায় বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল পত্রপত্রিকায়। ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত তখন বাঙালির কাছে স্পষ্ট। প্রতিবাদ চলতে থাকে। তবে কার্জন ছিলেন অনড়-অটল। তিনি সিমলা ঘোষণায় ‘বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত’ বলে সাফ জানিয়ে দেন। তার উত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন, ‘আমি এই অনড় সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটাবই।’
জুলাই মাসের এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়াটি ছিল তাৎক্ষণিক ও জোরালো। ওইদিন বিকালেই হিন্দু অভিজাত গোষ্ঠী আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে একটি জনসমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। তবে এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লেখ করতেই হয়। পূর্ববঙ্গে তার ছিল পৈতৃক জমিদারি। সমাবেশ শেষে তারা কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। রবীন্দ্রনাথ ওই মিছিলেও ছিলেন। তিনি ওই মিছিল থেকেই দুই লাইনের একটি ছড়া লিখেন, ‘ভাই ভাই একটাই, ভেদ ভেদ নাই।’ অর্থাৎ ‘পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব বাসিন্দা একে অন্যের ভাই এবং বাংলা হচ্ছে তাদের অবিভাজ্য ঠিকানা।’ বাংলার মুসলিম এবং হিন্দুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের এ চেতনা জাগিয়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েক দিনের মধ্যে কিছু উদ্যোগ হাতে নিলেন। এর মধ্যে ছিল ‘রাখিবন্ধন’। রাখিবন্ধন হচ্ছে একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ‘বিপদ থেকে রক্ষার প্রতীক’ হিসেবে একে অন্যের হাতে একটি সুতা বেঁধে দেওয়াই এ উৎসবের মূল কথা। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি প্রতিবাদী মিছিলে রবীন্দ্রনাথ নিজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের হাতে রাখিবন্ধন পরিয়ে দিয়েছিলেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর পরামর্শে বাঙালির ঐক্যের নিদর্শনস্বরূপ ঘরে ঘরে ‘অরন্ধন’ পালিত হয়। হাটবাজার, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, আদালত বন্ধ থাকে। বাংলার লাখ লাখ মানুষ শোভাযাত্রা, প্রতিবাদ সভা ও ধর্মঘটে শামিল হন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন ক্রমে ব্যাপক গণ-আন্দোলনে রূপ লাভ করে। সরকার আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য কঠোর দমননীতি অনুসরণ করে। জাতীয়তাবাদী পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ করা হয়। সরকারি আদেশে যুগান্তরের প্রকাশনা বন্ধ হলো। ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকার সম্পাদক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় অভিযুক্ত হলেন। ‘বরিশাল হিতৈষী’ নামের পত্রিকাটিও বাদ পড়েনি এ সরকারি দমননীতির কবল থেকে। কিন্তু গণমানুষ ক্রমে রুষে উঠতে থাকে। ফলে সরকার কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে।
তবে এ সময় বাংলার মুসলিমরা বঙ্গভঙ্গ রুখতে তেমন অংশ নেননি। ইতিহাস বলে, বাংলার মুসলিমরা বিভক্ত বাংলা চায়নি। আবার ইতিহাস এটাও সাক্ষ্য দেয়, তারা এ বিভক্তিকে রুখতে এক ফোঁটা রক্তও ঢালেনি। কেননা এ সময় পূর্ব বাংলার শিক্ষিত মুসলিমরা বঙ্গভঙ্গের সুবিধা আঁচ করতে পেরেছিলেন। আমেরিকান প্রফেসর জন আর ম্যাকলেইন ‘বাংলা ভাগ’ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেছেন, ‘১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে শিক্ষিত মুসলিমরা সাদরে গ্রহণ করেন, কারণ এর মাধ্যমে তাদের শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়।’
তবে বিষয়টি কলকাতার হিন্দু ‘ভদ্রলোক’দের ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। কেননা তাদের জন্য এ ‘বিভক্তি’ ছিল শুধু বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে দুটি অসম ভাগে ভাগ করা নয়, বরং তা ছিল অভিজাত ‘ভদ্রলোক’দের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এক বিশাল হুমকি। পাশাপাশি এটা পূর্ব বাংলার হিন্দুদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের ভাষাগত সংখ্যালঘুতে পরিণত করত। তাই তারা এর বিরোধিতা শুরু করে। ফলে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে স্বার্থের একটি টানাপড়েন তৈরি হয়। এভাবেই ইংরেজরা এদেশের হিন্দু ও মুসলমানদের বিভক্ত করে নির্ঝঞ্ঝাট শাসনকার্য পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এমনকি পূর্ববঙ্গে দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিধি তারা আরও বাড়াতে চেয়েছিলেন।
তাই লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের পক্ষে মুসলমানদের সমর্থন আদায় করতে চাইলেন। এ সমর্থন আদায়ের পেছনে অনেক ঐতিহাসিক অনেকভাবে মত দিয়েছেন। ড. অতুল সুর লিখেছেন ‘মোট কথা নানারকম রাজনৈতিক কারণে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গদেশকে খর্ব করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। এ কারণে বাংলাকে তারা বহুধাবিভক্ত করার চেষ্টা বহু আগে থেকেই করে আসছিল।’ আরেক দল ঐতিহাসিকের যৌক্তিক মতামত হলো ব্রিটিশরা আসলে ‘বিভক্তি ও শাসন’ নীতি অবলম্বন করেছিল। কারণ যাই হোক, কার্জন এ নীতিতে খুব সুচারুভাবে এগিয়ে চলেছিলেন। এমনকি অনেকাংশে সফল হয়েছিলেন। এ প্রক্রিয়াতেই, তিনি ১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম সফর করেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি লর্ড কার্জন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর ঢাকাস্থ বাসভবন ‘আহসান মঞ্জিলে’ উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে এক বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন ঢাকা এত দিন ছায়া হয়ে পড়ে ছিল। সরকার এখন থেকে ঢাকাকে পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত করবে। এখানে বিনিয়োগ হবে। ফলে মুসলিমরা উপকৃত হবেন ও প্রভ‚ত সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করবেন। এ নতুন প্রদেশের রাজধানী হবে আত্মনির্ভরশীল প্রশাসনিক রীতিনীতির ওপর; যার মূল ভিত্তি হবে এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতি ও মতামত। ফলে এখানকার মুসলিম জাতি-সংস্কৃতি হিন্দুদের ওপর প্রাধান্য পাবে।
চাকরিবাকরির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম স্বার্থও তখন সামনে আসে। কেননা ১৯০১ সালে তৎকালীন বাংলা সরকারের অধীনে উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ হয়। এ নিয়োগে মুসলিমরা মাত্র ৪১টি পদ পেয়েছিল। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ হয়েও হিন্দুরা নিয়োগ পেয়েছিল ১২৩৫টি উচ্চপদ। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা এবং সাব-ডিভিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় মুসলিমরা ছিল মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ। পুলিশ বিভাগে মুসলিমদের উপস্থিতি আরও খারাপ। তখন ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল রেঞ্জ’ নামে পরিচিত পুলিশ বিভাগে মোট ৫৪ জন ইন্সপেক্টরের মধ্যে চারজন, ৪৮৪ জন সাব-ইন্সপেক্টরের মধ্যে ৬০ জন, ৪৫০ জন হেড কনস্টেবলের মধ্যে ৪৫ জন এবং ৪৫৯৪ জন কনস্টেবলের মধ্যে মাত্র ১০২৭ জন কনস্টেবল ছিলেন মুসলিম। তাছাড়া গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে আদালতের সামনে হাজির হওয়া ব্যারিস্টার পর্যন্ত, সব স্তরে হিন্দুদের প্রভাব ছিল। প্রভাব ছিল শিক্ষাব্যবস্থায়ও। গ্রামের স্কুলশিক্ষক থেকে শুরু করে সচিবালয় পর্র্যন্ত হিন্দু ইতিহাস, রূপকথা ও মূল্যবোধকে পাঠ্যবইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হতো। ভ‚মি ব্যবস্থাপনায়ও গ্রামে জমিদারের কাচারি থেকে জেলার ভ‚মি রেকর্ড অফিস পর্যন্ত ছিল হিন্দুদের প্রভাব।
এসব কারণে মুসলিম শিক্ষিত গোষ্ঠী বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সন্তুষ্ট মনোভাব প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাংলার উচ্চবর্ণের হিন্দু যারা ছিলেন জমিদার, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবীÑতারা ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর কারণ অনুসন্ধান করেছেন জন আর ম্যাকলেইন। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক শিক্ষিত হিন্দু যৌক্তিক কারণেই মনে করতেন যে বিভক্তির মানে হচ্ছে তাদের প্রাপ্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়া’। ‘অনেক বর্ণ হিন্দুর জমিদারি ছিল পূর্ববঙ্গে। অথচ তারা বসবাস করত পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। আবার অনেকের পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থলেই ছিল জমিদারি। এ কারণে তারা দুদল প্রতিনিধি ও উকিল নিয়োগের ব্যাপারটি অপছন্দ করেছিলেন। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা লেখক, সাংবাদিকরা কলকাতা ছাড়তে পারছিলেন না। যদিও পূর্ববঙ্গ থেকে আসা আয়ের ওপরই তারা নির্ভরশীল ছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মক্কেলদের ওপর নির্ভর করতেন। কলকাতার উকিলরা ভয় পেয়ে গেলেন, তারা মনে করলেন, নতুন একটি প্রদেশ মানেই নতুন আরেকটি আদালত। মানে এটা তাদের পসারে ভাগ বসাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগই ছিলেন পূর্ববঙ্গ থেকে আসা। তাছাড়া বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দুরা উভয় বঙ্গে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিহারী এবং ওড়িশ্যানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। বিক্রমপুরের বাবুরা তাদের কেরানির চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাছাড়া কলকাতার কাছেই ভাগ্যকুলের রায় পরিবারের ছিল কাঁচা পাট ও চালের ব্যবসা। এ কারণে চট্টগ্রামের সম্ভাব্য উত্থানে তাদের হিংসা হয়।
এর পাশাপাশি পূর্ববঙ্গেও রাজনৈতিক শিরোমণিদের মনে হলো: আইন পরিষদে বসার সুযোগ ফস্কে যাবে। আর কলকাতার রাজনীতিকরা দেখছিলেন তাদের প্রভাব গুরুতরভাবে কমে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলার হিন্দুরা গণপ্রতিরোধের আর কোনো বিকল্প দেখেন না। তাই তারা সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমে আসেন। বয়কট আর স্বদেশি আন্দোলন প্রায় যুগপৎভাবেই চলতে থাকে। বয়কটের পরিপূরক হিসেবে স্বদেশি চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে।
গবেষক, শেয়ার বিজ
mshelleyjuÑgmail.com
Add Comment