বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকে বিসিআইসি’র ৬ শিল্পপ্রতিষ্ঠান

জাকারিয়া পলাশ : রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) উৎপাদনক্ষম ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় এগুলো নিয়মিত উৎপাদন করতে পারছে না। অন্যদিকে ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টি দীর্ঘদিন ধরে লোকসান দিয়ে আসছে।

প্রসঙ্গত, এক সময় বিসিআইসির আওতাধীন সার, সিমেন্ট, কাগজ, গ্লাসশিট, হার্ডবোর্ড ও ইন্সুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার খাতের প্রায় ১৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে চারটি বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়।

বিসিআইসির আওতাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সংস্থার সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল গত মাসে (জুন) শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, “বিসিআইসি’র কোম্পানিগুলো লোকসান গুনছে- এটা অনেক দিনের কথা। আসলে কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। ফলে এগুলো সক্ষমতার বয়সসীমা অতিক্রম করায় এদের মেশিনারিজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিপুল কর্মীবাহিনীর বেতন-ভাতাসহ নানা রকম ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। এ জন্য বিসিআইসি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।”

সংস্থার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংস্থাটির অধীনস্থ ৯টি কোম্পানি মোট ২৯৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এর মধ্যে ঘোড়াশালের ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, কর্ণফুলী পেপার মিলস ৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ২৯ কোটি টাকা, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি প্রায় ৩১ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্সুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি (বিআইএসএফ), উসমানিয়া গ্লাসশিট ফ্যাক্টরি, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলসের নাম রয়েছে লোকসানি কোম্পানির তালিকায়। এছাড়া ২০১৬ সালে বিলুপ্ত ঘোষিত ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি থেকেও ৯ কোটি টাকার লোকসান গুনেছে বিসিআইসি।

অন্যদিকে বিসিআইসির চারটি কোম্পানি লাভজনক অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে স্থাপিত যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি বার্ষিক ২৫৪ কোটি টাকা, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানি ১০৫ কোটি টাকা বার্ষিক লাভ করেছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। কিন্তু, এ দুটি কোম্পানিতেও নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সক্ষমতার সমপরিমাণ উৎপাদন করতে পারছে না বলে জানা গেছে। এছাড়া পতেঙ্গার টিএসপি কমপ্লেক্স ও ডিএসপি ফার্টিলাইজার কোম্পানিও কিছুটা লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।

বিসিআইসির লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হয়েছিল গত এপ্রিলে। এর জবাবে সম্প্রতি জানানো হয়েছে যে, “লোকসানি নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি’-কে ২০১৬ সালের জুনে বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকার। অবশিষ্টগুলোর মধ্যে তিনটি হচ্ছে ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি সিদ্ধান্তে বছরের প্রায় ৫-৭ মাস গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ফলে এগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকে।’ পর্যাপ্ত গ্যাস সংযোগ পাওয়া গেলে এগুলো লাভজনক করা যাবে বলে সংস্থাটি লিখিতভাবে জানায়।

এদিকে নয়টি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কর্ণফুলী পেপার মিলস, ছাতক সিমেন্ট ও বিআইএসএফ-এ বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছিল বিসিআইসির গত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে। পরে এ তিনটি কোম্পানির উন্নয়নের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ছাতক সিমেন্ট কারখানায় ৬৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির সিমেন্ট উৎপাদনের পদ্ধতি বদলে ‘ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেস’-এ রূপান্তর করার কাজ চলছে।

এছাড়া কর্ণফুলী পেপার মিলসের সংস্কার করে সেখানে লাভজনক করার জন্য সৌদি আরবের আল রাজি কোং ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে ২০১৬ সালে। এর আওতায় কোম্পানিটির জমিতে একটি নতুন কাগজের কল ও ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

লোকসানি অপর কোম্পানি বিআইএসএফকে উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালে জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদের (এনসিআইড) সভায় আলোচিত হয়। তার ভিত্তিতে গঠিত আর্থ-কারিগরি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই কমিটি এখন কোম্পানির উন্নয়নের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে কাঁচামাল ও চলতি মূলধনের অভাবে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটিও ২০১৩ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০