মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: স্মরণকালের ধসের রেশ কাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ফিরে আসার রেশ পড়েছে ডিএসইর লেনদেনে। এক বছরের ব্যবধানে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে আড়াইগুণ। এর পাশাপাশি ডিএসইর সূচক এবং বাজার মূলধনে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্যহারে প্রবৃদ্ধি। একইসঙ্গে প্রভাব পড়ছে বাজার মূলধন ও বিও অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কারণেই পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছরের ২৩ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ চলতি বছর ২৩ মার্চ লেনদেন গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে লেনদেন বেড়েছে ৬২৬ কোটি টাকা, যা দেড়গুণের বেশি বা ১৫১ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১ হাজার ৩৪৫ পয়েন্ট। গত বছর সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৩৮১ পয়েন্ট। গত সপ্তাহের শেষদিনে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭২৬ পয়েন্ট। একই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে বাজার মূলধন ও বিও অ্যাকাউন্ট। এদিকে গত এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছেন প্রায় দেড় লাখ। একইভাবে বেড়েছে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ। চলতি বছরে বাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী।
বিষয়টি নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, গত এক বছরে পুঁজিবাজারের চিত্র অনেক বদলে গেছে। তাদের মতে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারের স্থিতিশীলতা থাকা। গত এক বছরের বেশিরভাগ সময় বাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো থাকায় এখানে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে লেনদেন, সূচক, বাজারমূলধনসহ সর্বস্তরে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারের গতি ফেরার প্রধান কারণ হচ্ছেÑবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। সে কারণে তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। আর বর্তমানে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, এখন বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর রয়েছে হাতের নাগালে। তিনি বলেন, বাজার কেন দিন দিন স্বাভাবিক হচ্ছে এটা ভালো দিক। তবে এই বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ ধরে রাখায় দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন।
এদিকে গত এক বছরে বাজার ভালো থাকায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওর অবস্থা ভালো থাকলেও গতি ফেরেনি ২০১০-১১ লোকসানি বিনিয়োগকারীদের। তাদের ফোর্টফোলিওতে এখনও লোকসান রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। যে কারণে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ভুক্তভোগী এসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্থিতিশীল বাজারে শেয়ার কিনে সমন্বয় করে লোকসান পোষানো ব্যাকরণসম্মত। তবে বাজারসংশ্লিষ্টদের এমন পরামর্শ থাকলেও এতে তাদের সুফল মেলেনি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এখনও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছেন সেসব বিনিয়োগকারী, যারা ২০০৯-এর শেষের দিকে বিনিয়োগ করেছিলেন। তখন মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক প্রায় ১২০০ পয়েন্ট বেড়ে ৮ হাজার ৯১৮-এ অবস্থান করে। আর ডিএসইর লেনদেন গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকায়। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কোনো কোনো শেয়ার ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর পরপরই বাজারে ধস নামে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একদিনের ব্যবধানে সূচকের পতন হয় ৬০০ পয়েন্ট। পরবর্তী সময় সূচক সাড়ে তিন হাজারের ঘরে নেমে যায়। লেনদেন চলে যায় ২০০ কোটি টাকার নিচে। যে কারণে যারা চড়ামূল্যে শেয়ার কিনেছিলেন তারা আজও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
ডিএসইর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছে। তারা আগের মতো না বুঝে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, তেমনি বাজারও ভালোর দিকে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে পুঁজিবাজার আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
Add Comment