মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রেখে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। গতকাল বছরের সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচকের বড় উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। এদিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দীর্ঘদিন পর পাঁচ হাজার ৪০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি শেষ কার্যদিবসে দেনদেনও ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ৪০২ পয়েন্টে। এর মাধ্যমে ডিএসইর এ সূচকটি এক বছর ছয় মাস বা ৩২৮ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে। এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন গতকালের চেয়ে ওপরে ছিল সূচকের অবস্থান। ওইদিন ডিএসইর এই সূচকটি পাঁচ হাজার ৪২১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
এদিকে গত এক বছরের হিসাবে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ৯৪৯ পয়েন্টে। চলতি বছরের প্রথম দিনে সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৫৩ পয়েন্টে, শেষ দিনে যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০২ পয়েন্টে।
অন্যদিকে গতকাল শেষ দিনে ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি। ফলে লেনদেনেও তাদের অংশগ্রহণ বেশি পরিলক্ষিত হয়, যার জের ধরে লেনদেনও আগের চেয়ে বাড়তে দেখা যায়। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে চলতি বছরের ধারাবাহিকতা আগামী বছরে অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার এখন ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হচ্ছেন। ফলে লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও বাড়ছে, যার জের ধরে বাড়ছে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো। এটা ভালো লক্ষণ। কারণ বাজারের সার্বিক অবস্থা ইতিবাচক থাকলে এখানে নতুন বিনিয়োগকারী আসেন। তবে বাজারের অবস্থা যেমনই থাকুক বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্কভাবে বিনিয়োগ করা, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিছু ভালো মানের কোম্পানির। এছাড়া অনিয়ম করায় বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজারে এখন এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে পুঁজিবাজারের অবস্থা আরও ভালো হবে।
তারা বলছেন, এখন যেহেতু পুঁজিবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে, তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের ‘প্যানিক সেল’ করা চলবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন শেয়ার বিজেকে বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বিশ্বাস বেড়েছে, যে কারণে বাজারের সার্বিক পরিবেশ বদলে গেছে। আশা করছি এ ধারা চলমান থাকবে।