সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রবৃদ্ধির হার বেশ কয়েকবার ওঠানামা করে। বেশিরভাগ সময় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও নভেম্বরে ঘুরে দাঁড়ায়। অর্জন করে আট দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। তারপর এক মাস না যেতেই ফের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কবলে পড়ে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশনটি। ডিসেম্বরে রাজস্ব আহরণে দশমিক ৭১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কভিড-১৯-এর কারণে গত বছরের মার্চে শুরু হয় লকডাউন। তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুর গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। এতে দেশের বড় শুল্ক স্টেশনটি রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্র থেকে অনেকখানি পিছিয়ে পড়ে। এতে করে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়ায় ৯ হাজার ৯০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে রাজস্ব আহরণে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে পরের মাসে প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। আগস্টে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এরপর সেপ্টেম্বরেও বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল। ওই মাসে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। কিন্তু অক্টোবরে এসে সেই প্রবৃদ্ধি আর ধরে রাখতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অক্টোবরে পুনরায় প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হয়ে যায়। তবে এক দশমিক ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অক্টোবর শেষ হলেও নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল আট দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা আবার ডিসেম্বর শেষে ধরে রাখতে পারেনি। ডিসেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আয় করতে পেরেছে তিন হাজার ৬৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩২ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩১ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণ করেছে ২১ হাজার ৬৬৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। একইসঙ্গে আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় দুই দশমিক ৪১ শতাংশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কমিশনার ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে তো কিছু প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। এছাড়া বেশকিছু উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানিও আগের তুলনায় কমে গেছে। এতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ তুলনায় কমেছে। তবে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে। আশা করছি অর্থবছর শেষে খুব একটা ব্যবধান হবে না লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আগের অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে আদায় করেছিল ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।