শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। এ কারণে বেড়েছে বেকারত্বের হার। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে কর্মসংস্থানে যে গতি এসেছিল, তা ফের কমতে শুরু করেছে। তবে এ খবরে চাঙা হয়েছে ওয়াল স্ট্রিট; বছরের সেরা সপ্তাহ পার করল পুঁজিবাজারগুলো। খবর: এপি ও দ্য গার্ডিয়ান।
গত শুক্রবার সপ্তাহের শেষ দিন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে পয়েন্ট বৃদ্ধি পায় ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এতে সূচক ৪ হাজার ৩৫৮ দশমকি ৩৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। সপ্তাহের প্রতিদিন এই সূচক বাড়তে দেখা গেছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ২২২ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ যোগ করে ৩৪ হাজার ০৬১ দশমিক ৩২ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া নাসডাক কম্পোজিট সূচক একলাফে ১৮৪ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ হাজার ৪৭৮ দশমিক ২৮ পয়েন্ট হয়েছে।
এদিকে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার আগের মাসের শ্রমবাজারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিভাগ। গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ছিল এক লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার। এতে দেশটিতে বেকারত্ব ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ৯৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই মাসে তিন লাখ ৩৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও তার পূরণ হয়নি, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে কর্মসংস্থানের হার ছিল তুলনামূলক কম।
শ্রমবাজারের এ খবরে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার চাঙা ভাব দেখা গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড যে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছিল, সেই ধারায় এবার ছেদ পড়বে। গত বছরের মার্চ থেকে ফেড ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে। ফলে দেশটিতে নীতি সুদহার এখন ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মূলত সমাজে অর্থের প্রবাহ হ্রাস করার জন্য নীতি সুদহার কমানো হয়, অর্থাৎ সমাজে অর্থের প্রবাহ কমলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে এবং পরিণামে চাহিদায় টান পড়বে। এতে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পারবে। বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই না করে মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাবে। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই এখনও চলছে। সেজন্য ভবিষ্যতে নীতি সুদহার আবার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের অর্থনীতিবিদরা এক মাসের কর্মসংস্থানের উপাত্ত থেকে খুব বেশি কিছু ধারণা করতে চান না। কিন্তু অক্টোবরের প্রতিবেদনে বোঝা যাচ্ছে, অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পারবে। বেকারত্ব ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বনি¤œ ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, দুই বছর ধরেই তা ৪ শতাংশের নিচে। যদিও অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছিলেন, সাম্প্রতিক অতীতে দেশটিতে যে হারে কর্মসংস্থান হয়েছে, তার গতি কমে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডিন বেকার বলেন, চার শতাংশের কম বেকারত্বের হার থাকলে কোনো অর্থনীতি কর্মসংস্থানের এ হার ধরে রাখতে পারবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বৃদ্ধির হারও কমে এসেছে। অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঘণ্টাপ্রতি মজুরি বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার ভবিষ্যতে ফেডের নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে সপ্তাহগুলোয় ওয়াল স্ট্রিটের সূচকগুলোয় ধারাবাহিকভাবে পতন দেখা যায়। চলতি বছরে সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট কমে প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০।
এদিকে ইউরোপের পুঁজিবাজারগুলোর সূচকে মিশ্র ভাব দেখা গেছে। এছাড়া এশিয়ার বেশিরভাগ সূচক উত্থানের ধারায় ছিল।
