বসুন্ধরার বিটুমিন প্লান্টের যাত্রা

বছরে উৎপাদিত হবে আট লাখ টন বিটুমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট। বসুন্ধরা গ্রুপের অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি নামক এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম বেসরকারি বিটুমিন প্লান্ট। সড়ক নির্মাণে উন্নত বিটুমিনের জোগান দিতে ‘রোড টু দ্য ফিউচার’ সেøাগানে এ প্রকল্পটি নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরার প্লান্টে উৎপাদিত হবে বছরে আট লাখ টন বিটুমিন।

গতকাল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে গড়ে ওঠা বিটুমিন প্লান্টটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপরই উৎপাদন শুরু করে বিটুমিন প্লান্টটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্ট প্রফেসর ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া। এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এবং ওয়ালিদ সোবহান। সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা বিটুমিন মূলত একটি হাইড্রোকার্বন পণ্য। বিটুমিন জ্বালানি তেলের একটি বাই-প্রোডাক্ট পণ্য। এটি মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহার করা হয়।

অনুষ্ঠানে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রথম বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরার কল্যাণে আমাদের আর বিটুমিন আমদানি করতে হবে না, এজন্য আমরা আনন্দিত।  আমরা এখন পর্যন্ত বিটুমিন নিয়ে সমাধান খুঁজে পাইনি। আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায়, এমন বিটুমিন পাইনি। আমদানি করার পর গুণগত উৎকর্ষ ধরে রাখতে পারতাম না। রাস্তাগুলো টেকসই হতো না। কিন্তু বসুন্ধরা সেই সমাধান নিয়ে এসেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তারা বিদেশেও বিটুমিন রপ্তানির পরিকল্পনা করছে। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলতেন, আমাদের রাস্তাগুলো কবে উন্নত দেশের মতো হবে? আজ আমরা আনন্দিত, বসুন্ধরা সেই কাজটি করে দিচ্ছে। বসুন্ধরার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের আর বাইরে থেকে বিটুমিন আমদানি করতে হবে না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও তারা এ পণ্য পৌঁছে দেবেন। এটাই বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সঙ্গে আমার আলোচনা হচ্ছিল। একসঙ্গে তিন লাখ কর্মসংস্থান হয়, এমন একটি কারখানা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ইকোনমিক জোনে আমাদের অনেক জায়গা আছে, সেখানেই তৈরি হবে সে কারখানা। একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি উদ্যোক্তাকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

নসরুল হামিদ বলেন, সোনার বাংলাদেশ গড়তে প্রাইভেট সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে। তিল তিল করে একেকটি ইন্ডাস্ট্রি যোগ হচ্ছে। হচ্ছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের কাছে ঈর্ষণীয়। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, অনেকে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে বাড়ি-গাড়ি বানাত। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সন্তানরা দেশে এসে রাতদিন খেটে যাচ্ছেন, ইন্ডাস্ট্রি করছেন, উদ্যোক্তা হচ্ছেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে বিটুমিন প্লান্ট করছেন। তারা নিজের দেশের সোনার ছেলে। প্রাইভেট সেক্টর থেকে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। যেকোনো মুহূর্তে আমরা ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারি। আমাদের ক্যাপাসিটি ২২-২৩ হাজার মেগাওয়াট। আগামী বছর ২৪ হাজার মেগাওয়াট হবে। ২১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট হয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আকবর সোবহান বলেন, অর্থমন্ত্রী একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সার্বিক সহযোগিতা পেলে অবশ্যই তিন লাখ মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে, এমন কারখানা তৈরি করব আমরা। অর্থমন্ত্রীকে দিয়ে এ কারখানা উদ্বোধন করা হবে। বসুন্ধরা গ্রুপ শেখ রাসেলের নামে একটি ক্রিকেট একাডেমি করবে। আকবর সোবহান আরও বলেন, গত কয়েক বছরে অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মাত্র একটি সিদ্ধান্তে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রবাসী আয়। এখন শুধু হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে একটি কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানান বসুন্ধরা চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে বিটুমিনের চাহিদা বছরে পাঁচ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিটুমিন সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতিবছর এর চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও জানানো হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্লান্ট থেকে বছরে সাড়ে আট লাখ টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদিত হবে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়। দেশে চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে। সড়কে ব্যবহারের জন্য পেনেট্রেশন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন ছাড়াও বসুন্ধরার প্লান্টে প্রিমিয়াম মানের পিচ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। এই প্লান্টে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাটব্যাক, ইম্যুলসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমার (এসবিএস, রাবার পাউডার) উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা বিটুমিনের অডিও ভিজ্যুয়াল ও লেজার শোতে ফুটিয়ে তোলা হয় প্লান্টের বিভিন্ন দিক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০