বছর শুরুর পতনের ধাক্কায় বেসামাল বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নতুন বছরে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল ও চাঙ্গা হবেÑএমনই প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু বছরের প্রথম সপ্তাহেই তাদের সেই প্রত্যাশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। ফলে লাভের বদলে দৈনিক লোকসানের হিসাব করতে হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যে পতনের জের ধরে ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে বস্ত্র খাতের দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতবছরের শেষদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার বছরের শুরুতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক বাজারে। যে কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

গত বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করার পেছনে ব্যাংক খাত, আর্থিক খাত, গ্রামীণফোনসহ বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দরপতনেও এসব কোম্পানি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও ব্যাংক খাতে লেনদেন করা ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৯টির দর কমেছে। আর আর্থিক খাতে থাকা ২৩টির মধ্যে দর কমেছে ১৭টির। সূচক পতনে অন্যান্যের মধ্যে গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে পতনের ধাক্কায় ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে বস্ত্র খাতের দুই প্রতিষ্ঠান জেনারেশন নেক্সড ও তুংহাই নিটিংয়ের শেয়ারের দর। গত ডিসেম্বরের শেষদিকেও এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ফেসভ্যালুর ওপরে লেনদেন হচ্ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক ছন্দপতন শুরু হলে এসব শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর নিচে চলে আসে। গতকাল দিন শেষে তুংহাই নিটিংয়ের শেয়ার ৯ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। একইভাবে জেনারেশেন নেক্সড টেক্সটাইলের শেয়ার দিন শেষে ৯ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হতে দেখা যায়। বিনিয়োগকারীরা জানান, বছরের প্রথম পতনেই তারা বেসামাল হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।

এদিকে বস্ত্র খাতের এই দুই প্রতিষ্ঠান ফেসভ্যালুতে নেমে আসায় এ তালিকা ভারী হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে বর্তমানে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে মোট ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ফ্যামিলি টেক্স, ডেলটা স্পিনিং, ঢাকা ডায়িং, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার ও বেক্সিমকো সিনথেটিক।

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করলে এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার এক্ষুনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে আমি সেটা মনে করছি না। নিয়ম অনুযায়ী সূচক যদি প্রতিদিন এক শতাংশের বেশি বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় তবে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়। আমাদের বাজারে এখনও তা হচ্ছে না। তবে বর্তমানে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে, এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এসব কোম্পানি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই বিনিয়োগকারীদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে এখনও অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা।’

একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারে টানা উত্থান বা পতন কোনোটাই ভালো নয়। তবে আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে নাজুক। সেই বিবেচনায় বলতে গেলে বাজারে এখনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসেনি। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে তাদের উচিত হবে দুর্বল ও জেড ক্যাটেগরির লাগাম এখনই টেনে ধরা। কারণ দুর্বলের পাশাপাশি কিছু মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া দরকার।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমি মনে করি পুঁজিবাজার এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। লেনদেন ও সূচক রয়েছে স্বাভাবিক পর্যায়ে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০