গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বিদ্যুৎবিহীন জনগোষ্ঠীর শীর্ষ পাঁচের তালিকায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক খবরটি এরই মধ্যে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ছয় বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় আড়াইগুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এবং গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও মোট জনগোষ্ঠীর এক বৃহদাংশ এখনও বিদ্যুৎ সুবিধাবিহীন। উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটির ভিত্তি বিশ্বব্যাংক ও গ্লোবাল ট্র্যাকিং ফোরামের (জিটিএফ) যৌথ গবেষণা। খেয়াল করার মতো বিষয়, গবেষণাটি সম্পন্ন হয় ২০১৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। তদুপরি বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর তালিকায় শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে আটটিই হয় দারিদ্র্যপীড়িত, নয়তো যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা দুটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। তবু এখানে আমাদের সঙ্গে ভারতের তুলনা অসমীচীন হবে এজন্যও যে, ভৌগোলিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সেখানকার ৭৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে যেখানে বাংলাদেশের বেলায় সংখ্যাটি ৬২ শতাংশ। অবশ্য প্রতিবেদনটিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বাংলাদেশের অনগ্রসরতার কেবল সমালোচনাই করা হয়নি; প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০০ সালে যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৩২ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো, সেখানে ২০১৪ সালের মধ্যে ৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুতের আওতায় আসাটা কম বড় কথা নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি বলতে হয়, নীতিনির্ধারকদের মানসিকতার পরিবর্তন। অতীতে বিদ্যুৎবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা উঠলেই যেমন-তেমন যুক্তি পেশ করা হতো; বাস্তবতাকে আমলে নেওয়া হতো খুবই কম। আমাদের প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ যে মন্তব্য করেছেন, তা থেকে স্পষ্ট বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের মাথায় রয়েছে এবং তারা এ নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন।
কথা হলো, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিতরণ বৃদ্ধির চটজলদি কোনো টেকসই সমাধান দেওয়া কঠিন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে একদিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার মতো কর্মসূচি চালু। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে তার চাহিদাও তো বেড়েছে। বিশেষত শিল্প খাতে বরং চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ হচ্ছে বিদ্যুৎ। অথচ উৎপাদন বৃদ্ধি তথা কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা হাসিলে বাড়তি বিদ্যুৎ দরকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে রয়েছে কৃষিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রশ্নও। এখন শিল্প বা বাসাবাড়িতে বাড়তি বিদ্যুৎ জোগাতে গিয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারি না আমরা। আবার বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। জনগণ যদি বিদ্যুৎ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ছোঁয়া না পায়, সেটি নিশ্চিত করা কঠিন হবে। তদুপরি রয়েছে দূষণমুক্ত উপায়ে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ। খেয়াল করা দরকার, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সৌর ও পরমাণু শক্তির সম্ভাবনা প্রমাণিত এবং সরকার ওই উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যত্নবান বলেও মনে হয়। তবে বাড়তি চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। এ অবস্থায় সরকারের ক্রমাগত চেষ্টা থাকা উচিত, যেন প্রচলিত পদ্ধতিতেই যথাসম্ভব পরিচ্ছন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি জনগণকে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল পাইয়ে দিতে এর বিতরণব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণের ওপর আরও জোর দিতে চাইবেন সবাই। আমরা আশা করি, নীতিনির্ধারকরা এর প্রতি কর্ণপাত করবেন।
Add Comment