জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বটতলায় বাহারি ভর্তার সমাহার

নোমান বিন হারুন, জাবি : ‘এই যে মামা এই দিকে, ভর্তা আছে/ হরেক পদের ভর্তা/ ভর্তাভাত খেতে চলে আসুন এখানে’ দুুপুুরে খাওয়ার সময় এমন হাঁকডাকে মুখর থাকে চারপাশ। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলার কথা। দিনের পুরোটা সময় এখানে শিক্ষার্থীদের গল্প-আড্ডা-গানে মুখর হয়ে থাকে চারপাশ। শুধু শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, অতিথিদের কাছেও জাবির বটতলা এক প্রিয় জায়গা। জাবিতে এসে বটতলার ভর্তাভাত না খেলে ভ্রমণটা যেন পূর্ণতা পায় না। জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরতে এসেছেন, অথচ বটতলায় খাননিÑএমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

এক অনন্য প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে এ বটতলাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে বটতলা প্রাঙ্গণ। সেইসঙ্গে চলে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা। এটিই বটতলার প্রাণ। এখানে দোকানগুলোর নামও কী বাহারিÑতাজমহল, নূরজাহান, বাংলার স্বাদ, সুজন ও বাঙালি হোটেল প্রভৃতি। নামগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি।

দুপুর না হতেই হরেক রকম ভর্তার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এখানকার ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি রয়েছে স্বাস্থ্যগুণও। পাঁচ টাকা করে দাম দিয়ে আপনি অত্যন্ত ৩০-৩৩ প্রকারের ভর্তা খেতে পারবেন। কী নেই সেই ভর্তা উৎসবে!

দোকানিরা জানান, কয়েক রকমের মাছভর্তা, বিভিন্ন রকমের শুঁটকিভর্তা, ডিমভর্তা, চিকেনভর্তা, কালিজিরার ভর্তা, আলুভর্তা, পেঁপেভর্তা, শুকনো ডালভর্তা, সরষেভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা-সহ হরেক রকম ভর্তা পাওয়া যায়। বেলা বাড়তেই দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ বাইরের অতিথিদের। শুধু ভর্তায় কি আর পেট ভরে! ভর্তার পাশাপাশি আছে বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ডিম তরকারি, মুরগির মাংস, খাসির মাংস, ইলিশ মাছ, চাপিলা মাছ, রুই মাছসহ আরও কত কি!

জাবিতে বেড়াতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীরনগরে বেড়াতে এসেছি। ঢাকার কাছেই এমন নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে ভাবতে পারিনি। সেইসঙ্গে বটতলায় দুপুরের খাবার খেয়ে সত্যিই ভালো লেগেছে। এর আগে কোথাও হরেক রকম ভর্তার স্বাদ পাইনি। এখানকার মানুষগুলোও খুব অতিথিপরায়ণ।’

জাহাঙ্গীরনগরে বটতলার নামকরণ কীভাবে হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। বলা হয়ে থাকে, আগে এখানে এক বড় বটগাছ ছিল, আর সে থেকেই এর নাম বটতলা। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে আপনিও পরখ করে নিতে পারেন বটতলার ভর্তার রাজ্যের মুখরোচক ও সুস্বাদু ভর্তা। প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মল সৌন্দর্যের সঙ্গে মজাদার খাবারÑসবকিছু মিলিয়ে ভালো একটি সময় কাটবে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে জাবি ক্যাম্পাসে।

নিয়মমাফিক জীবনে একঘেয়েমি এলে আমরা যেমন ঘোরাঘুরি করি জীবনকে আবার চাঙ্গা করতে, তেমনই প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র্য আনতে আয়োজন করি ভিন্ন ধাঁচের দেশীয় খাবারের। এ ভাবনা থেকে জাহাঙ্গীরনগরের বটতলা হতে পারে একটি সত্যিকার জায়গা। একদিকে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যদিকে সুস্বাদু নানা পদের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় এখানে। ছুটির দিনগুলোয় তাই স্মৃতি হাতড়ে সাবেক শিক্ষার্থীরা ভিড় করেন ক্যাম্পাসে আর আড্ডা জমায় বটতলায়। নানারকম ভর্তা ও খাবারের স্বাদে বা চায়ের কাপে পুরোনো স্মৃতি আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে বটতলায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০