বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম বাড়ল ৩৫ শতাংশ

ইসমাইল আলী:বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০০৬ সাল থেকে ব্যবহার করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সে সময় প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম ধরা হয়েছিল ৬০ ডলার। পরে তা চার দফা বাড়িয়ে ১০ বছরের মধ্যে করা হয় ১৩০ ডলার। এর ছয় পর বছর আবারও বাড়ল বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম। গত জানুয়ারি থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর করেছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি।

জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমান বড়পুকুরিয়ার প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম ১৭৬ ডলার। অর্থাৎ প্রতি মেট্রিক টনে দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৬ ডলার বা ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত মাসে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। যদিও তা জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। তবে পিডিবির প্রস্তাব ছিল আগামী জুলাই থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর করা, যা মানা হয়নি।

কোল মাইনিং কোম্পানি যুক্তি দেয়, কয়লা উত্তোলনে ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত পুরোনো চুক্তির মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। চীনের এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী খনির উত্তর দিকে কয়লা উত্তোলন করা হবে। জানুয়ারি থেকেই তা কার্যকর করা হোক। নতুন চুক্তিতে কয়লা উত্তোলন ব্যয় বেড়ে যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর হয়।

এর আগে কয়লার দাম নির্ধারণ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে কোল মাইনিং কোম্পানি ও পিডিবি। কোল মাইনিং কোম্পানির প্রস্তাবনামতে, গত অর্থবছর কয়লা বিক্রি করা হয় চার লাখ ৮৭ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন। এতে মোট ব্যয় হয় ৫৮০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মেট্রিক টন কয়লার উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১১ হাজার ৯০৩ টাকা বা ১৩৮ দশমিক ৩৬ ডলার (১ ডলার=৮৬.০৩ টাকা)। আর প্রতি মেট্রিক টন কয়লা পিডিবির কাছে বিক্রি করা হয় ১৩০ ডলারে। অর্থাৎ প্রতি মেট্রিক টন কয়লা বিক্রিতে কোল মাইনিং কোম্পানির লোকসান হয় আট ডলারের বেশি।

এদিকে চলতি অর্থবছর সম্ভাব্য কয়লা সরবরাহের পরিমাণ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন, আগামী অর্থবছর সাত লাখ মেট্রিক টন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর ছয় লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর আট লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর ৯ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর ছয় লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক

টন। এ ছয় বছর কয়লা সরবরাহে গড় ব্যয় পড়বে যথাক্রমে ১৮১ দশমিক ৫৫ ডলার, ১৪৪ দশমিক ৩১ ডলার, ২০৭ দশমিক ১০ ডলার, ১৮৩ দশমিক ১১ ডলার, ১৭৯ দশমিক ৮৭ ডলার এবং ১৫৬ দশমিক ৩২ ডলার (১ ডলার=১০৬ টাকা ধরে)। এতে প্রতি মেট্রিক টন কয়লার গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ১৭৫ দশমিক ৫২ ডলার। এর সঙ্গে ৪৮ সেন্ট মুনাফা যোগ করে দাম ধরা হয়েছে ১৭৬ ডলার।

কয়লার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে কোল মাইনিং কোম্পানি জানায়, এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী খনির উত্তর দিকে কয়লা উত্তোলন করা হবে। এজন্য খনির উত্তরাংশ বর্ধিত করতে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকা অবশ্যই লাগবে। এছাড়া চলতি অর্থবছর ১৫ দশমিক ৬৫ একর জমি খনির মধ্যভাগের জন্য অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য ১১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ব্যয়কে কয়লার দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এদিকে ২০২৪-২৫, ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছর উত্তরাংশের জমি অধিগ্রহণের জন্য ৪০০ কোটি টাকা করে ব্যয় বিবেচনায় ধরা হয়েছে। আর খনি থেকে কয়লা সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে উত্তরাংশে উš§ুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এছাড়া জামালগঞ্জ কয়লা খনি ও আলিহাট লৌহ আকরিক খনি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং দিঘীপাড়াসহ অন্যান্য কয়লাক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন। এ খাতে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা প্রতি বছর সমানভাবে বরাদ্দ ধরা হয়েছে সম্ভাব্য বাজেটে।

যদিও কোল মাইনিং কোম্পানির এ দুই প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছিল পিডিবি। জমি অধিগ্রহণ ও অন্য প্রকল্পের অনুসন্ধান ব্যয় বাদ দিয়ে উৎপাদিতব্য কয়লার দাম নির্ধারণ করার কথা জানায় তারা। তবে তা বাতিল করে দেয় মন্ত্রণালয়। এছাড়া কয়লার উৎপাদন ব্যয়ের ওপর ১০ শতাংশ মুনাফা চেয়েছিল কোল মাইনিং কোম্পানি। সেটিও বাতিল করে দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে উত্তোলনের শুরুতে পিডিবির জন্য প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ ডলার। ২০০৮ সালের ১ জুলাই তা বাড়িয়ে ৭০ ডলার, ২০১০ সালের ১ জুলাই ৮৪ ডলার, ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ১০৫ ডলার এবং ২০১৫ সালের ১ মে ১৩০ ডলার দাম নির্ধারণ করা হয়। সে সময় দেশীয় বিক্রেতাদের কাছে প্রতি টন কয়লার দাম নেয়া হতো ১০ হাজার ১৮৬ টাকা। তবে ২০১৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এজন্য প্রতিদিন কয়লার প্রয়োজন সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু খনিতে বর্তমানে দৈনিক উৎপাদিত হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া খনির যে স্তর থেকে বর্তমানে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, সেখান থেকে প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টনের বেশি কয়লা পাওয়া সম্ভব নয়। এতে প্রতিদিন ঘাটতি থাকে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে আবার বছরে শিফট পরিবর্তনের জন্য খনির কয়লা উত্তোলন তিন মাস বন্ধ থাকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০