প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সেরাজুল ইসলাম নবাব (৩৫) নামে এক খনি শ্রমিকের মৃতু্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় হিটস্ট্রোক হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক সেরাজুল ইসলাম নবাব পার্বতীপুর উপজেলার ঘুঘুমারী গ্রামের আইনুল হকের ছেলে। তিনি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিনা সিএমসির এক্সএমসির অধীনে কয়লা উৎপাদনের কাজ করতেন।
খনি সূত্রে জানা গেছে, সেরাজুল ইসলাম নবাব বুধবার রাত ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার শিফটের কাজ শেষ করে নিজ কক্ষে আসার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় সহকর্মীরা নবাবকে খনির অভ্যন্তরের হাসপাতালে নিয়ে গেল সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সুলতান মাহমুদ, ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, শ্রমিক সেরাজুল ইসলামের হিটস্টোকে মৃত্যু হয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত করে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
খনি শ্রমিকরা বলছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার মধ্যে তাদের কাজ করতে হয়, কাজ শেষে আবার টিনের ঘরে তাদের থাকতে হয়, এতে করে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এদিকে খনি শ্রমিক সেরাজুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে শোকের মাতম চলছে তার গ্রামের বাড়ি পার্বতীপুর উপজেলার ঘুঘুমারী গ্রামে। সেরাজুল গত ৩ জুন পরিবারের সদস্যদের রেখে খনিতে কাজে যোগ দেয়ার জন্য খনিতে প্রবেশ করে, এক মাস পর তারা মরদেহ বাড়িতে আসে। সেরাজুলের মৃত্যুর খবরে আহাজারি করছেন তার স্বজনরা।
খনি শ্রমিকরা জানান, চলতি সালের গত তিন জুন সেরাজুল ইসলামসহ ওই দলের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার জন্য খনিতে প্রবেশ করে। সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে ১১ জুন থেকে কাজ শুরু করেন। ১৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় তার মৃত্যু হয়। কাজে যোগ দেয়ার মাত্র এক মাস পর সেরাজুল ইসলামের মরাদেহ পরিবারে কাছে ফেরত আসে। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার এলাকায়।
খনি শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সারাদেশে স্বাভাবিকভাবে সব অফিস-আদালত চললেও কেবল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ খনিতে লকডাউন করে রেখেছে। যে কারণে শ্রমিকরা মাসের পর মাস পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে খনির ভেতরে টিনের ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করে খনিতে কাজ করতে হচ্ছে। এতে তারা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিনা কোম্পানির অনুরোধে ও কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খনি এলাকায় লকডাউন রাখা হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে খনি এলাকা স্বাভাবিক করা হবে বলে তিনি জানান।